ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার সাত বছর

মামলা থমকে আছে আইনি জটিলতায়

মামলা থমকে আছে আইনি জটিলতায়

গতকাল শুক্রবার ছিল কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্তি। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের নামাজ শুরুর আগ-মুহূর্তে মাঠের কাছেই পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ, দুই জঙ্গিসহ নিহত হয় পাঁচজন। এখনো আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর। শোক কাটেনি নিহত ও আহতদের পরিবারের। ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলা মামলার বিচার কার্যক্রম থমকে আছে আইনি জটিলতায়। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, জঙ্গিরা দেশের অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারনে স্বশরীরে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য স্বাক্ষী প্রতি তারিখে উপস্থিত থাকলেও শুরু করা যাচ্ছে না স্বাক্ষী নেয়ার প্রক্রিয়া। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ শুরুর আগমুহূর্তে জঙ্গিদের গুলি আর বোমায় কেঁপে ওঠে ঈদগা মাঠের চারপাশ। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ঈদগাহের অদূরে, মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি তাড়িত করে এলাকাবাসীকে। এমন নৃশংস ঘটনার দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার দাবি এলাকাবাসীর। ঘটনার সময় নিজের ঘরের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক। এখনো শোকে কাতর তার স্বজনরা। নিহত ঝর্ণা ভৌমিকের স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক বলেন, বিচারকার্য এখনো শুরুই হলোনা, এটা দুঃখের বিষয়। আমি বেঁচে থাকতে আমার স্ত্রী হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। ছেলে শুভদেব ভৌমিক বলেন, আমার মা আমার কাছে বসেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। মনে পড়লে এখনো ঘুম ভেঙে মাকে খুঁজি। আমি তখন ছোট ছিলাম। এমনভাবে কেউ যেন তার মা না হারায়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, জঙ্গি হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত মামলাটি তদন্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলায় জঙ্গিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তার। জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু জানান, দেশের অন্যান্য মামলায় এসব জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। প্রতি তারিখে স্বাক্ষীরা উপস্থিত থাকলেও থমকে আছে মামলার বিচার কার্যক্রম। আশাকরি আগামী তারিখে তাদের উপস্থিত করার ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় ওই বছরের ১৪ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে, ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ইন্সপেক্টর আরিফুর রহমান। এ মামলায় বর্তমানে চার্জশিটভুক্ত পাঁচজন জঙ্গি ঢাকা এবং রাজশাহী কারাগারে রয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত