উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন

বাস্তুহারা হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফয়জার রহমান রানু, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ (ক্রসবাঁধ) হুমকির মুখে পড়েছে সংযুক্ত ঐতিহ্যবাহী বসুনিয়াপাড়া-মুন্সিপাড়ার প্রায় দুই শতাধীক বাড়িঘর। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তিস্তার আগ্রাসনে বাস্তুহারা হয়েছে ওই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে আরো কয়েকশত পরিবার। এছাড়া, দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা মৌজার ঐতিহ্যবাহী বসুনিয়া পাড়ার শতাধীক বাড়িঘর নদীর তীব্র ভাঙনে সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি স্থাপনা, ফসলি জমি। নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় কর্পূরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসুনিয়া পাড়া জামে মসজিদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত বর্ষা মৌসুমের আগে কর্পূরা মুন্সির বাড়ি রক্ষায় কিছু জিওব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা খরস্রোতে নদীর গর্ভে চলে গেছে। তীব্র ভাঙন চললেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে গ্রামটির কাছেই অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের ঝুঁকি আরে বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। গত সোমবার ভাঙনকবলিত বসুনিয়াপাড়া গ্রামে তিস্তার তীরে ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। গত ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডবে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা, আবাদি জমি, কবরস্থান গিলে খেলেছে তিস্তা নদী। আরো অনেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়িঘর। তিস্তার ভাঙনে ছয়বার ভিটে সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আবেদ আলী। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি ভিটে সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। রেজোয়ান ও সিকেদ্দার বসুনিয়া বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাই, বুকের ভিতরাটা ভাঙি যায়। এতোবার ভিটা ভাঙে, তাও কাইয়ো শোনে না- দেখে না, বা। আমরা খুব অসহায়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে একই কথা বললেন, ওই এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সি আ. মান্নান। তিস্তার ভাঙনে সর্বহারা হয়ে এখন ফকির হতে হয়েছে অনেককে। বাড়িঘর সরাতে সরাতে হাফসি গেছে মতিয়ার রহমান, এরশাদুল, আব্দুল মালেক, আ. সামাদ, মজিবর, সেকেন্দার, জামাতাল্লি, আশরাফুলসহ ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড (কর্পূরা) পুরোটাই এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ অংশ ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ছয় মাসে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত ৬০০ একর। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র কামরুজ্জামান রানা সুন্সি বলেন, গত ছয় মাসে তিস্তার ভাঙনে অন্তত ৪০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। বর্তমানে নদীর ভাঙনে মানুষ দিশাহারা হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এ মৌজাটি ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। বর্তমানে বসুনিয়া পাড়ায় যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে, দ্রুত প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে দু-চার দিনের মধ্যে গ্রামটি বিলিয়ন হয়ে যাবে। এলাকাবাসী জানান, চলতি বর্ষায় অর্থাৎ সপ্তাহ খানেক আগে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে গেলেও এখনো কোনো প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ভাঙন রোধের বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।