মাধবপুরে তালপাখায় শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাণিজ্যিকভাবে তালপাখা তৈরি করে দুই শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। এগুলো বিক্রি হচ্ছে উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাণিজ্যিকভাবে তালপাখা তৈরি করছে মাধবপুর উপজেলার পানিহাতা, ঘিলাতলী, গাংগাইল, মেরাশানী, মনতলা, আদাঐর, শাহপুর, চৌমুহনী, ধর্মঘর সহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। তাদের আয়ের একমাত্র উপার্জন হচ্ছে তালপাখা তৈরি। বাণিজ্যিকভাবে পাখা তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আর্থিকভাবে তারা এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী। ভীষণ গরমে জনজীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে তালপাখার বাতাস প্রাণ জুড়ায় গ্রাম-বাংলার মানুষের। তাই তালপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাখা পল্লির কারিগররা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাখা পল্লির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে, কেউ আবার সুতা ও বাঁশের শলাতে রং করছে। কেউ বাঁধছে পাখার বোঝা। কাজের ব্যস্ততায় শরীরের ঘাম মাটিতে পড়লেও নিজেদের তৈরি পাখার বাতাস নেওয়ার সময় নেই তাদের। গরমের শুরুতে পাখা পল্লির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এখানকার তৈরি পাখা দেশের বিভিন্ন জেলার ও উপজেলায় যাচ্ছে। আদাঐর ইউনিয়নের পানিহাতা গ্রামের রুস্তম মিয়া জানান, একটি পাখা তৈরি করতে ২৫ টাকার বেশি খরচ হয়। তারা পাইকারি হারে পাখা বিক্রি করেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা। একজন কারিগর প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি তালপাখা তৈরি করতে পারেন। ফলে প্রতিটি কারিগর বিক্রির মৌসুমে দিনে যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারেন। পাইকাররা এখন বাড়ি থেকেই পাখা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেশাটাকে ধরে রাখতে কাজ করছি। আমাদের গ্রামের প্রায় ১০ থেকে ১২টি পরিবার তালপাখা তৈরির পেশায় রয়েছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা ছোটবেলা থেকে বড়দের কাজে সাহায্য করতে করতে তারাও নানান নকশার পাখা তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমার তিন ছেলে। সবাই আলাদা সংসারে পাখা তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত। আরেক পাখা তৈরির কারিগর মো. মুরসালিন জানান, তাদের পুঁজি কম। তাই অল্প পুঁজি নিয়ে এ পেশা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সরকার যদি পাখা কারিগরদের বিনামূল্যে ঋণের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে এ শিল্পকে ধরা রাখা যেত। কারিগর আক্কাছ মিয়া বলেন, এ বছরের প্রচণ্ড তাপদাহ আর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পাখার ব্যাপক চাহিদা। গ্রামের সব বাড়িতেই পাখা তৈরি করা হয়। ফলে গ্রামটি তালপাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ পাখা পল্লি থেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আশপাশের অনেক জেলার পাইকাররা এসে নগদ টাকায় কিনে নেন। পূর্ব পুরুষদের পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনও তারা পাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়া জানান, হাত পাখার তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সব সময় পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমে চারা গাছের পাতা কিনে আনেন তারা। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন হাসান বলেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস বিভিন্নভাবে লোন দিয়ে থাকে। যদি পাখা বানানোর কারিগররা উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেয় তাহলে তারা সেখানে থেকে লোন নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমি তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তিনি আরো বলেন, যদি প্রত্যেকটি পরিবারে একটি করে তালগাছ রোপণ করে তাহলে ১ বছর পর থেকেই পাতা দিয়ে তাল পাখা বানানোর উপযুক্ত হয়ে যায় এমনকি তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক একটি গাছ। এ গাছ বাড়িতে থাকলে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।