পিরোজপুরে জমে উঠেছে চাঁইয়ের হাট

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পিরোজপুর প্রতিনিধি

বর্ষার শুরুতে নতুন পানির সঙ্গে খাল-বিল, নদ-নদীতে দেখা মেলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনাগোনা। আর এসব মাছ শিকারে ব্যবহার হয় চাঁই বা দুয়ারি অথবা খাদোইন। পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জমে উঠেছে এসব মাছ ধরা যন্ত্রের ফাঁদ। জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি, বাবুরহাট, দিঘিরজান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মাছ ধরার চাঁই খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। নাজিরপুর উপজেলা শ্রীরামকাঠি নদীর তীরে সড়কের পাশে জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সপ্তাহের রোববার ও বুধবার দুই দিন চাঁইয়ের হাট বসে। প্রতি হাটে পাঁচ থেকে সাত হাজার চাঁই বিক্রি হয়। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে চাঁই সাঁজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। হাটে চাঁই কিনতে এসেছেন কাউখালী, পিরোজপুর সদর, নেছারাবাদ, পাথরঘাটা, বরগুনাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাইকার ও খুচরা ক্রেতা এবং আশপাশের কৃষক ও জেলেরা। স্থানীয় চায়ের দোকানদার জানান, গত শনিবার বিকালে আসা শুরু করে চাঁই আর রাতেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। ভোর হতেই ক্রেতা বাড়তে থাকে এবং বেলা ১টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়। এ সময় সদর উপজেলার কলাখালী গ্রামের পাইকারি ক্রেতা মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫) জানান, আমি এক কুড়ি চাঁই এগারো, বারো, তেরোশ’ টাকায় কিনে পনেরশ’ টাকা থেকে শুরু করে আঠারোশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করব। এ চাঁই কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, আউম্মা, পাথরঘাটা, বরগুনাসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। তবে চায়না জালে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার কারণে চাঁইয়ের দাম কম। হোগলা গ্রাম থেকে খুচরা চাঁই কিনতে আসা কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, তিনি চাঁই কেনার জন্য হাটে এসেছেন। দুই জোড়া চাঁই চারশ’ টাকায় কিনেছেন গত বছরের তুলনায় দাম কম। দাম কম হওয়ার কারণ তিনি বলেন, পানি কম তাই মাছও কম এজন্য চাঁইয়ের দাম কম। দাম যতই হোক প্রতিবছর বর্ষাকালে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার চাঁই কিনি। স্থানীয় চাঁই ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার বিভিন্ন হাটে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে চাঁই বিক্রি হয়। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে চাঁইয়ের হাটে বেচাকেনা বেশি হয়। এ সময় হাটগুলোয় প্রচুর চাঁই ওঠে। তবে এ বছর পানি কম, মাছও কম তাই চাঁই তেমন বিক্রি হচ্ছে না। চাহিদামতো দাম পাচ্ছি না। ঋণ নিয়ে এ কাজ শুরু করি। ঋণের দেনা শোধ করার পর সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক, পাঁচপাড়া, ডাকাতিয়া ও জুজখোলা এবং নাজিরপুর উপজেলার জয়পুর, আজালিবুনিয়া, দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী, আমতলা গ্রামসহ বেশকিছু গ্রামের নারী-পুরুষ বাড়িতে বাঁশ দিয়ে চাঁই তৈরি করেন। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকে চাঁই তৈরি শুরু হয়। গ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা চাঁই কিনে হাটে বিক্রি করেন। অনেকে নিজের তৈরি চাঁই হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। বাঁশ, নাইলন বা প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে চাঁই তৈরি করা হয়।