বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে নরসিংদীর লটকন

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  একেএম রেজাউল করিম, রায়পুরা (নরসিংদী)

নরসিংদী জেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লটকন চাষ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে নরসিংদীর লটকন। ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন জেলার লটকন চাষিরা। এখানে প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা ঝুঁকে পড়ছে লটকন চাষের প্রতি। নরসিংদীর লটকন এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এতে করে এ অঞ্চলের চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে রসালো ফল মানেই লটকন। আর লটকন মানেই নরসিংদী। নরসিংদীর উঁচু আর লাল মাটির টিলা লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। লটকন চাষে রোগবালাইয়ের তেমন একটা ঝামেলা নেই এবং খরচ ও কম। রোপণের ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই ফলন আসে। ফল দেয় টানা ২০ থেকে ৩০ বছর। তাছাড়া লটকন বিক্রি নিয়ে ও কোনো চিন্তা নেই। কারণ পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যান। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার শিবপুর, বেলাব, রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলায় লটকন চাষ হয়। এর মধ্যে শিবপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ১৬ টন লটকন উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত জমিতে মোট ২৬ থেকে ২৭ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের আশাবাদ কৃষি অফিসের। প্রতি কেজি ৭০ টাকা করে বিক্রি ধরলে উৎপাদিত লটকনের মূল্য পাওয়া যাবে প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা। এছাড়া বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতে ও রয়েছে লটকন গাছ যা কৃষি বিভাগের হিসাবের বাহিরে। এই জেলার শত শত চাষি লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য পেয়েছে। বেলাব উপজেলার লটকন চাষি মানিক মোল্লা বলেন, তিনি দুই একর জমিতে লটকন বাগান করেছেন। এ বছর একটি বাগান ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং অপর একটি বাগান ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। শিবপুর উপজেলার গিলাবের গ্রামের লটকন চাষি জোবায়ের আল মামুন বলেন, ৪ বিঘা জমিতে লটকন চাষে তার খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি বিক্রি করতে পারবেন আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, এই এলাকার লটকন খুবই সুস্বাদু। এই অঞ্চলের অনেকেই লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল লটকন। আরেক লটকন চাষি মাওলানা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা দুই ভাই মিলে এখানে লটকন চাষ করেছি। এই বাগান থেকে আমরা প্রতি বছরই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারি। লটকন চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার লটকন খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। আমাদের এলাকায় অনেকেই লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সরকার লটকন চাষিদের প্রতি গুরুত্ব দিলে এই এলাকার লটকন উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। লটকনের পাইকারি ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া বলেন, এই এলাকার লটকন খুবই ভালো এবং এর চাহিদা অনেক। আমি এই লটকনের ব্যবসা করে খুব লাভবান। আমরা এই এলাকার লটকন কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করি। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের লটকন ইউরোপেও রপ্তানি হয়।