ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এক ইউনিয়নেই ১২ ইটভাটা

নোয়াখালীতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়

নোয়াখালীতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়

নোয়াখালীর সেনবাগে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। সেখানকার একটি ইউনিয়নেই ১২টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ইটভাটার কারণে দিন দিন পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এদিকে পরিবেশ দূষণের ফলে স্থানীয়রা ভুগছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে। মাঠে উৎপাদন হচ্ছে না ফসল, গাছে ধরছে না ফল। আগামী প্রজন্মের জন্য সেনবাগের ছাতারপাইয়া হয়ে উঠছে অনিরাপদ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেনবাগের ছাতারপাইয়া ইউয়িনের এমকেবি ব্রিকফিল্ডে সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যায় প্রকাশ্য দিবালোকে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে স্তূপ করা হচ্ছে। সারিসারি মাটি কাটার ভেকু ব্রিক ফিল্ডের আশপাশের মাঠের পর মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ ব্রিক ফিল্ডের জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এমকেবি ব্রিক ফিল্ড সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাব খাঁটিয়ে দিনের পর দিন মাটি কেটে সাবাড় করছে ফসলি জমি। ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলেও তিনি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাছাড়া ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোঁয়ায় প্রায়ই অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। বিষাক্ত ধোয়া ও বাতাসের কারণে স্থানীয়রা ভুগছে নানা রকম রোগে। বিশেষ করে শিশুরা হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট রোগ, চর্ম এলার্জিসহ দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এমকেবি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দেয়াসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও সেখানে উল্লেখিত কোনো শর্তই মানছে না এমকেবি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ। ব্রিক ফিল্ডের কারণে আশপাশের জমিতে হচ্ছে না ফসল, গাছেও ধরছে না ফল। পরিবেশ দূষিত হয়ে এমকেবি ব্রিক ফিল্ডের আশপাশ মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এসব বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীর উপর নেমে আসে নির্যাতন। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আমরা বসবাস করাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করেন। তাছাড়া ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় আগামীকে এ অঞ্চলে খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে। কারণ একদিন ফসলি জমি থেকে তারা মাটি কেটে নিচ্ছে অন্যদিকে ইটভাটার প্রভাবে জমিতে ফসল হচ্ছে না। এই বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ কি দেখে না? একই কথা বলেন, ওই এলাকার কৃষক মজিদ আলী, হাসেম মিয়া, কলিম উদ্দিন। তারা ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার জানান, ইট ভাটাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের ব্যবসা করছে। আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি। একই ইউনিয়নের ১২টি ব্রিক ফিল্ড থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার জানান, ইটভাটার অনুমোদনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনও জড়িত। কেউ আমাদের কাছে আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে ইটভাটার ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। তবু কেউ অনিয়ন করলে সরেজমিন গিয়ে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে ছাড় দেয়া হবে না। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা, ফসলি জমি রক্ষার জন্য আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। প্রয়োজনে ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত