মাছ চাষে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় মৎস্য খামারের উপর মুরগির শেড করতে মৎস্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জে মৎস্য খামারের উপর মুরগির শেড করে নিচে মৎস্য পালন করা হচ্ছে। মুরগির বিষ্ঠা পানিতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি। এগুলো আবার সরাসরি খাবার হিসেবে খাচ্ছে মাছ। যার ফলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মতো বিষাক্ত উপাদান মাছের শরীরে মিশছে। এগুলো আবার স্থানীয় বাজারসহ চলে যাচ্ছে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায়। এসব মাছ খেয়ে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এভাবেই বিপজ্জনক মাছচাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের মাথিয়া এলাকার ফুরুল বন্দে। কৃষিজমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক মৎস্য খামার। প্রতিটি মৎস্য খামারের উপর রয়েছে মুরগির শেড। জানা গেছে, বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মাছ এখানেই উৎপাদন হয়। মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এখানে, যা বিষ্ঠা হয়ে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে। তবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ খামারিরা। চারজনের শেয়ারে মিজান পোল্ট্রি ফার্মের এক মালিক আব্দুর রহিম জানান, তাদের ফার্মে দুই হাজার মুরগি রয়েছে। তার নিচেই মৎস্য খামারে ১০ হাজার পাঙ্গাশ ও অন্যান্য মাছ মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ মাছ চাষ করা হচ্ছে। এভাবে মুরগির শেডের নিচে মাছ চাষ করতে কেউ নিষেধ করেনি। মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে মাছ দ্রুতই বড় হয়, তাই মাছ চাষ করছি। যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে নিরাপদ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে মৎস্য খামারের জন্য গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে মুরগির বিষ্ঠা আনা হতো মাছের খাবার হিসেবে। রাস্তার পাশে এগুলো ফেলে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হতো পথচারীদের। এসব বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চালানো হয়। এরপর বিষ্ঠা আনা কমলেও জনস্বাস্থ্যের বিপদ কাটেনি। কারণ খামারিরাই মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড বসিয়েছেন। ফলে বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ছে। রাসায়নিকযুক্ত বিষ্ঠা খেয়ে বড় হচ্ছে মাছ। এসব মাছ খেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। মৎস্য খামার ও মুরগির শেডে কাজ করেন শ্রমিক রাব্বি। তিনি জানান, তার মালিকের মৎস্য খামারের ওপর দুইটি মুরগির শেড রয়েছে। এভাবে মৎস্য খামারের ওপর মুরগির শেড দিয়ে চাষ করলে কম খরচে বেশি মাছ উৎপাদন হয় তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই এলাকাতে এভাবেই মুরগির শেডের নিচে মাছচাষ করা হচ্ছে। এই এলাকাতে প্রায় ৭০টি মুরগির শেড রয়েছে। প্রতিটি মুরগির শেডের নিচেই মাছচাষ করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম জানান, মাছের খামারের জন্য আলাদা খাবার তৈরি হচ্ছে। সেই খাবার মাছকে খাওয়ানো উচিত। মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ক্যান্সারসহ নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। এসব ব্যাধি সহসা প্রকাশ না পেলেও দীর্ঘদিন পর লক্ষণ দেখা দেয়।

এলাকার লোকজনের তথ্যমতে, মৎস্য খামারের উপর ৭০টির মতো মুরগির শেড রয়েছে। এসব মৎস্য খামারের মাছ উপরের শেডের মুরগির বিষ্ঠা খেয়ে বড় হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মৎস্য খামারিরা নিষেধ শুনতে চান না। হস্তক্ষেপ করলে বলেন, ব্যবসার ক্ষতি করা হচ্ছে। তারা গাজীপুর, ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে বিষ্ঠা আনেন। নিজেরাও ফিসারির উপরে মুরগির খামার করেছেন। মুরগির বিষ্ঠা পানিতে মিশে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করছে। এতে মাছের দেহ দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ফেলছে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হলে মাছ মারা যায়। এতে পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।