ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা

প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা

নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে আমের বৃহত্তম বাজার গড়ে উঠেছে। বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে বাজারটি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়িরা সেখানে আম কিনতে আসছেন। এ হাটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে আম উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাপাহার আমের বাজারে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকে ভ্যান, ভটভট ও অটোরিকশায় করে সাপাহার উপজেলাসহ পাশের পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্যারেট ভর্তি করে হাটে আম বিক্রি করতে আসেন বাগানিরা। আম হাটের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় মৌসুমি এসব আম সাপাহার-পত্নীতলা সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে বেচাকেনা চলে। এ সড়কের দুইপাশে রয়েছে আমের আড়ৎ। যেখানে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়িরা আসেন আম কিনতে। মে থেকে আগামী জুলাই (৩ মাস) পর্যন্ত চলে আমের বাজার। বরেন্দ্র এলাকার এঁটেল মাটির আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় এ জেলার আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। বর্তমানে বাজারে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম উঠেছে। আম্রপালি প্রকারভেদে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বারি-৪ জাতের ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা, ফজলি ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ৬ হাজার টাকা মণ হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায় আম্রপালি জাতের আম। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি ১৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৫ হেক্টর। আমের সুমিষ্ট ঘ্রান ভোক্তাদের আম খেতে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। এ জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে এর চাহিদাকে বাড়িয়ে তুলেছে। আম্রপালি আম এ জেলার ব্যান্ডিং হতে পারে। বাগান মালিকরা বলেন, এ বছর অনাবৃষ্টি, শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি তেল এবং সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় আম উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ বেশি পড়েছে। আড়তদারদের সিন্ডিকেটে বাজারে ৪৮ কেজিতে মণের পরিবর্তে ৫২ কেজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আমের আড়তে ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ক্যারেটে আম সাজিয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার আয় করা যায়। প্রতিটি আড়তে পাঁচ থেকে ১৫ জন শ্রমিক ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন। এ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মৌসুমি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ীয় আড়ৎদার বকুল হোসেন বলেন, এ উপজেলার আম্রপালি অত্যান্তু সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এ আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩০০ টাকা মণ চলছে। সাপাহার আড়তদার সমিতিসহ সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ৫২ কেজিতে মণ-এর অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ কেজিতে মণ কিনছি। তবে চাষিরা আম বাছাই না করে সবগুলো একত্রে করে বিক্রি করতে আসে। এতে ব্যবসায়িরা চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েক কেজি বেশি আম ধরে নেয়। এটা ব্যবসায়ী ও চাষিরা সমঝোতা করেই করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ বছর জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসাবে প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত