ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুরের মৃৎশিল্প

প্রয়োজন যথার্থ উদ্যোগ
অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুরের মৃৎশিল্প

আগে প্রাত্যহিক নানা কাজে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে এ শিল্প। মৃৎশিল্প মাদারীপুর জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। অথচ আজ প্রায় হারাতে বসেছে এই শিল্প। যারা কাজ করছেন নানা প্রতিকূলতার মাঝে কোনোরকমে টিকে আছেন তারা। তাদের দাবি, সরকারিভাবে এই শিল্পে সহযোগিতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে পারলে আবার ফিরবে এর হারানো জৌলুস। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাদারীপুরে কুমার সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫৫ পরিবারের ৭৭৫ নারী-পুরুষ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে কোনোমতে টিকে আছেন। এরমধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৪৩টি পরিবার, রাজৈর উপজেলায় ৫৮টি পরিবার, শিবচরে ২৮টি পরিবার এবং কালকিনিতে ২৬টি পরিবার আছে। সদর উপজেলার চরমুগিয়ার পিটিআই রোড এলাকা, পূর্ব রাস্তি, কুলপদ্দী, ঘটমাঝি, মস্তফাপুর, রাজৈর উপজেলার খালিয়া, গোয়ালবাথান, সেনদিয়া, কদমবাড়ি, মজুমদারকান্দি, শিবচর উপজেলার চান্দেরচর, দ্বিতীয়াখণ্ড, দত্তপাড়া, পাচ্চর, কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ির খাসেরহাট, পালপাড়ায় কুমাররা আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলা মৃৎশিল্পের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে সিলভার, স্টিল, প্লাস্টিক, সিরামিক, চীনামাটির অত্যাধুনিক তৈজসপত্রের কারণে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া, মাটির দাম বেশি, জ্বালানির দাম বেশি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব, মাটির তৈরি জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য আলাদা ঘরের অভাবসহ নানা কারণে মৃৎশিল্পদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। আর যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা ঠিকমতো সংসার চালাতেই পারছেন না। মাদারীপুর জেলার মৃৎশিল্পীরা মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির পাশাপাশি সব ধরনের দেবদেবীর প্রতিমা তৈরিতে দক্ষ। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও যারা এই পেশায় আছেন, তারা মূলত পৈত্রিক এ পেশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মৃৎশিল্পের কাজ করে যাচ্ছেন। মাদারীপুরের চরমুগরিয়ার কুমারপাড়ার কুমাররা জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ কুমারের পুনের ঘর নেই। তাই তাদের জিনিসপত্র পোড়াতে সমস্যা হয়। সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার কুমারপাড়ার দুলাল পাল বলেন, এ পেশায় থেকে জীবন আর চলে না। আগের মতো মানুষজনের কাছে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমতো খেতেই পারি না। তাই ভাবছি অটোরিকশা চালাব। তাতে করে আমাদের সংসার চলবে। কষ্ট কম হবে। একই উপজেলার খোয়াজপুর এলাকার অনিমেষ পাল বলেন, আমার বাবা সুকুমার পাল এখনো এ কাজ করছেন। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের ভিড়ে আমাদের এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

এ পেশায় থেকে পেটের খাবারটুকুই যোগাড় করা কষ্টকর। মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষণা সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস বলেন, হাত এবং চাকার সাহায্যে কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরির পর কাঁচা থাকতে তাতে কাঠি দিয়ে পাতা, ফুল, পাখি ও রেখাদির নকশা করা হয়। কখনো আবার দ্রব্যাদি পোড়ানোর পর এতে নানা রঙের সমাবেশে বৈচিত্র্যপূর্ণ আকর্ষণীয় নকশা করা হয়। বাঁশ, খড়কুটা, মাটি, কাপড় ও রং দিয়ে নির্মিত তাদের এ মূর্তিগুলো এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া তাদের জন্য একটি শোরুমের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত