সংস্কারের অভাবে গত ৪০ বছরে বালু ও পলিতে ভরাট হয়ে কমেছে তিস্তার গভীরতা, ফলে অল্প পানিতেই বন্যা ও ভাঙন বাড়ছে। ঘরবাড়ি আর জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। আতঙ্কে কান্না আর হতাশার মধ্যেই এখন দিন কাটছে তাদের। জানা গেছে, সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে তিস্তা তীরবর্তী নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার মানুষ। নদী আন্দোলনকারীরা বলছেন, বিশাল এক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে, যদি না তিস্তা পরিচর্যায় দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, তিস্তার মূলপ্রবাহ ছিল একটি। কিন্তু বছর দুয়েক আগে ৩ কিলোমিটারের মতো দূরে সরে গেছে এ প্রবাহ। এবার যখন পানি বাড়তে শুরু করেছে, তখন আবার তা ফিরে এসেছে পুরোনো চ্যানেলে। ডিমলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামের মকছেদ আলীর (৬০) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ বছরে ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা পরিবর্তন করেছেন বেশ কয়েকবার। ১০ বিঘা আবাদি জমির এখন অবশিষ্ট কিছুই নেই। মকছেদ আলী বলেন, ‘বাপের দেওয়া যে কয়েক বিঘা আবাদি জমি পাইছিনু। সব শেষ নদীভাঙনত। সব হারায় কোনোমতে জীবন চলিচ্ছে, যা যাওয়ার সব নদীতে চলি গেছে’। মকছেদ আলীর মতো তিস্তাপাড়ের অনেক বাসিন্দাই জানালেন বছরের পর বছর সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হলেও শুধু ত্রাণ সহায়তা ছাড়া আর কিছুই মিলেনি। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলী। ৭ বছরে তিনবার ভাঙতে হয়েছে তার বসতভিটা। প্রথম ভিটা কিনেও পরে ঘর বাঁধতে হয়েছে অন্যের জমিতে। তিনি বলেন, নিজের কেনা বাড়ি-ভিটা নদীতে চলে গেছে, এখন অন্যের জমিতে থাকি। খুব কষ্টে ৫ শতক জমি কিনছিলাম। এখন যে মানুষের জমিতে থাকি এখানেও নদী চলে আসছে কাছে। ‘এখন এখানেও আর থাকা যাবে না। কই যাব আল্লাহ মাবুদ জানে। আমি দিন কামাই করি রাইত খাই তারপর আবার কামাই কম। আগে তো নাও নৌকা বানাইতাম কামাই ভালো ছিল।’ ওমর আলী আরো বলেন, আবার বাড়ি ভেঙে নতুন করে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কোথায় যাব জানি না। সরকার যে ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে সেটাও পাইনি। টাকা পয়সা না থাকায় মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে যাইনি। ভূমিহীনদের নাম নিয়েছিল একবার, টাকা দিতে না পারায় আমার নাম দেয়নি। ওমর আলীর মতো ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবারের একই অবস্থা। তিস্তায় চোখের সামনেই সর্বস্ব হারিয়ে কোনোরকম টিকে আছেন তারা। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তাদের বসতভিটা, আবাদি জমিসহ জীবিকা নির্বাহের সবকিছু। প্রতিবছর বন্যা আসলেই অন্যরকম আতঙ্ক ভর করে তিস্তাপাড়ের লাখো বাসিন্দার।