ভাঙনে দিশাহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

ভাঙনের পর ভাঙন, তারপরেও তিস্তাপাড়ের মানুষগুলো ছাড়তে চায়না নদীর তীরবর্তী স্থানের বসবাস। তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বহুবার। ভাঙনের পর আবার আশায় বুক বাঁধে ওরা। চর জাগলে আবার ফিরে ওই দুর্গম চরাঞ্চলে। বাঁধে আবার ঘর। ভাঙা আর গড়ার মধ্য দিয়ে এভাবেই চলে ওদের জীবন। গত কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনের মাত্রা কম থাকলেও ভারি বর্ষণে এবছর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা, হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০০ পরিবার। পরিবার-পরিজনসহ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। এদিকে, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। আর তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণিতে ভেঙে সর্বস্ব হারাচ্ছে হরিপুরের পাড়াসাদুয়া, কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার ও ভাটি কাপাসিয়ার চরাঞ্চলের মানুষের বসতভিটা ও পাটক্ষেত। আর এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনে ভাঙনে ভাটি কাপাসিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জানা যায, গত শনিবার সকাল থেকে ভাঙন কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও বিকাল ৫টা নাগাদ তা তীব্র আকার ধারণ করে। উপায়ন্তর না দেখে ভাঙন স্থানে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি ব্রাকের ১২টি পরিবারকে তাৎক্ষণিক খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ভাঙন রোধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আরো অন্তত দুশো ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত সোমবার গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কাউনিয়া স্টেশনে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের তুলনায় পানির উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে ২১ সেন্টিমিটার। কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, ‘কাপাসিয়ায় নদীর পশ্চিম তীরে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর পূর্ব দিকে ভাটি কাপাসিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভাঙন রোধে ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, এরইমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরগঞ্জের কাশিমবাজার, পাড়াসাদুয়া, ভাটি কাপাসিয়া ও লালাচামারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে দুটি চলমান প্রকল্পের বাইরে লালচামার ও কাসিমবাজারে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।