কুড়িগ্রাম জেলা শিশু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাহফুজ খন্দকার, কুড়িগ্রাম

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কুড়িগ্রাম অফিসপ্রধান জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা এসএমএ বকরের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনায় ব্যহত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশের সরকারি প্রচেষ্টা। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অফিসের অবস্থান হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এসএমএ বকর জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে কুড়িগ্রামে কর্মরত আছেন। অফিসটিতে শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, গ্রন্থাগারিক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরীসহ এই অফিসে পদ রয়েছে পাঁচটি পদের বিপরীতে তিনিসহ অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক মিলে তিন পদে কর্মরত তিনজন। সরকারি বিভিন্ন দিবসের উদযাপন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা পর্ব এবং মাসিক বেতনের সময় ছাড়া তাকে কুড়িগ্রামে দেখা যায় না। অধিকাংশ সময়ে মাসিক জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে জেলার অন্যসব কর্মকর্তা থাকলেও এতে উপস্থিত থাকেন না। মাসের যে ক’দিন কুড়িগ্রামে থাকেন তখন রাত্রিযাপন করেন শিশু একাডেমি অফিসেরই একটি কক্ষে। যদিও কক্ষটি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে স্টোর আর থাকার কক্ষ হিসেবে। সেখানেই ক’দিন থাকেন এই কর্মকর্তা আর ক’দিন থাকেন তার কর্মচারী অফিস সহকারী রাকিবুল। এ কারণে শিশু গ্রন্থাগারের বড় একটি সেবাবঞ্চিত কুড়িগ্রামের শিশুরা। কুড়িগ্রাম শিশু একাডেমিতে সংগীত, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও তবলাসহ মোট চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী থাকলেও নৃত্য বিষয়ে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ বন্ধ রেখেছেন। প্রতিবছর সকল বিভাগের প্রশিক্ষণার্থী শিশুদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করার কথা থাকলেও কোনো রকমে ধরলা ব্রিজ পাড় ঘুরে নিয়ে এসে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে পুরো টাকাই লোপাট করেন এই কর্মকর্তা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৪-৫ বছরের দুস্থ শিশুদের জন্য) প্রকল্প কাগজে-কলমে চালু রয়েছে। অথচ দুইগ্রুপে ২১ জন করে শিশুর তালিকার বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে পাঁচজন ও ছোট গ্রুপে রয়েছে ছয়জন শিশু। শিশু একাডেমির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রতিযোগিতার সার্টিফিকেটে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তিনি শুধু কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট প্রদান করেন। মূলত এসবের বাজেট তিনি প্রকাশ করতে চান না। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুর অভিভাবক হাবিবুর রহমান জানান, তার মেয়ে আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল করলেও বারবার জুটেছে একই বই। তাও আবার সেসব বই ছেঁড়া-ফাটা।

কোনোটি ইঁদুর-তেলাপোকা খাওয়া বই। নাগেশ্বরী উপজেলার আজিজুর রহমান জানান, শিশু একাডেমিতে বিষয়ভিক্তিক ন্যূনতম জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিদের তিনি মনগড়া বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন। এ বিষয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা এসএমএ বকর বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় পাওনা ছুটি ভোগ করেছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা ছুটি নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিভিন্ন অনিয়মের কথা জানলাম। এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন মোবাইল ফোনে জানান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কুড়িগ্রাম অফিসের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারলাম। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।