কুষ্টিয়ায় চিকিৎসা অবহেলায় বাড়ছে এতিম শিশুর মিছিল

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম. আরিফ, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় চিকিৎসার নামে জীবনহানি নিত্যদিনের ঘটনা হলেও প্রতিকারে দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যত: কোনো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেয়ায় অবৈধ সিজারে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মায়ের স্পর্শ থেকে বঞ্চিত এতিম শিশুর মিছিল দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহর ও শহরতলীতে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিকগুলো প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবাকে শুধু মুনাফা আয়ের সহজ পথ হিসাবে নেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। একের পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এসব ক্লিনিক বন্ধে দায় নিচ্ছে না কেউ। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ৬ হাজার ৩১২টি জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে প্রসবকালীন সময়ে সাতজন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রসবকালীন সময়ে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু সংখ্যা ২৫ জন থাকলেও ২০২২ সালে এসংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৭ জনে। এসব মৃত্যুর ঘটনার ৯০ শতাংশ ভাগই ঘটেছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলাজনিত কারণে এসব মৃত্যু ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন মনে করছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে এ বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত সময়কালে সংঘটিত মাতৃ মৃত্যুর ঘটনাগুলো অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন ক্লিনিকে ঝরে যাওয়া আটজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনার পর্যালোচনায় জেলার স্বাস্থ্যসেবার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এরা সবাই অদক্ষ ও অপেশাদার ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে কথিত সিজারের শিকার হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সদ্যজাত শিশুকে রেখে নিহত হয়েছে। অপর একজন প্রসূতি শিশুসহ মৃত্যুরকোলে ঢোলে পড়ে বলে অভিযোগ পরিবারের। এ বিষয়ে বিএমএ নেতা ডা. আমিনুল হক রতন মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সতর্কতা জরুরি। সামান্যতম অবহেলাজনিত কারণে প্রাণহানির কারণ হতে পারে। কিছু রোগীরা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে বলে আমরা জানি। এসব নিরসনে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও দায়িত্বশীল ও যত্নবান হওয়া জরুরি। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটনার সংবাদ পেলেই আমরা সেখানে ছুটে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতাও পাই। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক বা হাসপাতাল বন্ধের সুপারিশ করি। এসব ক্ষেত্রে রোগীদেরও সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন এই সিভিল সার্জন।