ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লালমাই পাহাড়ে আলো ছড়াচ্ছে ‘জাপানি স্কুল’

লালমাই পাহাড়ে আলো ছড়াচ্ছে ‘জাপানি স্কুল’

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ‘জাপানি স্কুল’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে ?‘মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুল’। সেখানকার বড় একটি এলাকায় পাহাড়ি শিশুদের শিক্ষার তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় অকালেই ঝরে যায়, সেসব এলাকার শিশুদের ভবিষ্যৎ। এসব শিশুদের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ?‘মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুল’। বাঙালি সংস্কৃতির বলয়ে, বাংলা অক্ষর ও শব্দসহ বাঙালি সিলেবাসে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয় স্কুলটিতে। জাপানি অক্ষর কিংবা শিক্ষাব্যবস্থা কোনোটার তিলও নেই, তবুও স্কুলটি জাপানি স্কুল হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। স্কুলটি জাপানি স্কুল হিসেবে পরিচিতির রহস্য হলো, স্কুলটি নির্মাণ করেন মূলত তোশিকো অনিশি নামের একজন জাপানি নাগরিক এবং তার বন্ধুরা। তারিকুল ইসলাম মজুমদার নামের এক বাঙালির সঙ্গে বন্ধুত্ব তার। পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবে তারিকুল ইসলাম মজুমদারের প্রস্তাবে তোশিকো অনিশিসহ বেশ কয়েকজন জাপানি স্কুলটি নির্মাণ করেন। শুধু স্কুল নির্মাণই নয়। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার যাবতীয় খরচ, দুপুরের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, খেলনাসামগ্রী, শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় খরচ বহন করেন জাপানিজরা। স্কুলটিতে মাসে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয় তাদের। আনুষঙ্গিক খরচ জমিদাতা তারিকুল ইসলাম মজুমদার বহন করেন। জাপানিরা প্রতি বছর স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। স্কুলটিতে প্রতি শ্রেণিতে ২০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এসব শিক্ষার্থীদের কলম, পেন্সিল, খাতা, স্কুল ড্রেস ও খেলনাসমাগ্রীসহ যাবতীয় খরচ স্কুল কর্তৃপক্ষ বহন করে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসব শিক্ষার্থীদের গরম ভাত বাহারি তরকারি আর মাছ-মাংস দিয়ে খাওয়ানো হয় দুপুরের খাবার। তবে তাদের পাঠ্যবই দেওয়া হয় সরকারিভাবে। বই ছাড়া যাবতীয় সব শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয় স্কুল থেকেই। স্কুলটিতে বিনামূল্যেই পড়তে পারেন শিক্ষার্থীদের। স্কুলটিতে মোট সাতজন শিক্ষক রয়েছেন পাঠদানের জন্য। একজন প্রধান শিক্ষক অপর ছয়জন সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকদের সবাই নারী। এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতা স্কুল কর্তৃপক্ষই বহন করে থাকে। লালমাটির পাহাড়ের বুকে এ যেন এক মনোযোগ আকর্ষণ করা ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০১৬ সালে।

সুরাইয়া আক্তার নামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা-মা দুজনেই দিনমজুরের কাজ করেন। স্কুল হওয়াতে আমার লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক লাভলী আক্তার বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। পাহাড়ের বুকে এখানে মানুষ চলাচল করতে ভয় পেতো, সাপ-বিচ্ছুর জন্য। স্কুলটি এখানে হওয়াতে মানুষের পদচারণা বেড়েছে। পাহাড়ি এসব শিশুদের মধ্যে অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে।

স্কুলটির স্বপ্নদ্রষ্টা তারিকুল ইসলাম মজুমদার ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির পরিসর বৃদ্ধির কথা জানিয়ে বলেন, এখানে একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান করার জন্য জাপানি বন্ধুদের প্রস্তাব করেছি। সেখানে তিন বছর মেয়াদের কোর্স থাকবে। প্রতিষ্ঠানটিতে ইংরেজি এবং জাপানি ভাষা শেখানো হবে। পাশাপাশি কর্মমুখী কোর্স থাকবে। এখান থেকে দক্ষ জনশক্তি হয়ে জাপানসহ বাইরের রাষ্ট্রে কাজ করবে আমাদের সন্তানরা। আমার বন্ধুরা এতে ভালো সাড়া দিয়েছেন। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের কাজে হাত দিতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত