আত্রাইয়ে রাবার ড্যাম সংস্কার উপকৃত হচ্ছে এলাকাবাসী

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যামটি সংস্কার করা হয়েছে। এতে নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও মৎস্যজীবীরা আবারও সুফল পেতে শুরু করেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই মাসে রাবার ড্রামটি সংস্কার করা হয়। আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর তলদেশে কংক্রিটের শক্ত ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয় রাবার ড্যাম। যেখানে উজানের পানি ধরে রাখতে মেশিনের মাধ্যমে ফুলানো হয় এই রাবার ড্রাম। এতে একদিকে তৈরি হতো পানির জলধারা। যা শুষ্ক মৌসুমে নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা সেচের কাজে ব্যবহার করতেন। নদীর পানি দিয়ে সারা বছর ধান ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ করেন চাষিরা। এতে তাদের সেচ খরচ অনেক কম হতো এবং ফসল উৎপাদনের পরিমাণও বেশি হতো। রাবার ড্যামে আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলশিগঙ্গা নদীর দুই তীরের পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেচ সুবিধা পেয়ে থাকেন কৃষকরা। জানা গেছে, ২০১২ সালে শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর রাবার ড্যামটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে শেষে ২০১৭ সালে সম্পূর্ণ করে রাবার ড্যামটি স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিল ড্যামটি। রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর তিন বছর সুবিধা পেয়েছিল উপকারভোগীরা। এরপর নানা স্থানে ফুটো হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্রকল্পটির সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো উপকারভোগীরা। শুষ্ক মৌসুমে পানি দ্রুত ফুরিয়ে যেত। এতে খরচ বাড়ার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বেড়েছিল চাষি ও মৎস্যজীবীদের। অবশেষে রাবার ড্রামটি সংস্কার করা হলে নদীতে পানি জমতে শুরু করেছে। আবারও সুবিধা পেতে শুরু করেছে নদীর দুই পাড়ের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। নদীর পানি দিয়ে তারা আউশ ধানের চাষাবাদ শুরু করেছেন। মৎস্যজীবীরা জীবন-জীবিকার মাছ শিকার শুরু করেছে। নদীর পানিতে বোরো আবাদে খরচ হয় ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর গভীর নলকূপে খরচ পড়ে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। এছাড়া আউশের আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা। জেলার রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের নদীতে সেচ পাম্পের মালিক নওফেল হোসেন বলেন- রাবার ড্রাম নষ্ট থাকায় চৈত্র মাস আসার আগেই নদী শুকিয়ে যেত। বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ করায় খরচ বেশি পড়ত। রাবার ড্রাম ঠিক করার পর এখন নদীতে পানি জমা থাকছে। এই পানি দিয়ে আউশের আবাদ শুরু করা হয়েছে। নদীর পানি দিয়ে আবাদ করলে খরচ কম হওয়ায় পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বেশি হয়। গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলা হলে খরচ বেশি পড়ে। এছাড়া পানিতে লবণাক্ত থাকায় ফলনও কম হয়। কুনুজ গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন- সারা বছরই নদীর পানি দিয়ে বোরো ও আউশের পাশাপাশি বিভিন্ন রবিশস্যের ফসল চাষাবাদ করা হয়। নদীর পানিতে বোরো আবাদে খরচ হয় ১৩০০ টাকা। আর গভীর নলকূপে খরচ পড়ে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। এছাড়া আউশের আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা। কারণ এসময় বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমে থাকায় খরচ কম হয়। শুকটিগাছা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় লিমিটেড-এর সভাপতি শহিদুল ইসলাম, রাবার ড্যামটি তিন বছর থেকে অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি এলজিইডিতে কয়েকবার অবগত করা হয়েছিল। অবশেষে তা সংস্কার করা হচ্ছে। এতে নদীর দুই পাড়ের কৃষকসহ মৎস্যজীবীরা সুফল পেতে শুরু করেছে। এ সমিতির সদস্য (উপকারভোগী) সংখ্যা ১৪৫ জন। এরই মধ্যে ৮০ জন কৃষক। বাকিরা মৎস্যজীবী।