পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষি

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি নেই। তার উপর পাটের বর্তমান বাজার দর নিয়ে চিন্তিত তারা। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে পানির অভাবে পাট জাঁগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা। বিভিন্ন সময়ে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমমূল্য বৃদ্ধি ও পাট ছড়ানোর পানির অভাবে কৃষকরা এই ফসল চাষে কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে পাট চাষ ছেড়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষে ঝুঁকছেন। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এ জেলায় পাট চাষে কৃষকরা ভারতীয় একটি জাতের বীজের উপর নির্ভরশীল ছিল। এ বছর অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পায়নি। তবে এ ব্যাপারে প্রযুক্তি সহায়তাসহ নতুন জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে ছয়টি উপজেলায় মোট ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ-আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এবার ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরে একই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও চলতি মৌসুমে তার চেয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর কম জমিতে এই ফসল আবাদ হয়েছে। এদিকে আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ শুরু হয়েছে। এখন পাট কাটা ও পাট পচনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় চিন্তিত কৃষকরা। পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের নগর সাঁওতা গ্রামের কৃষক মেজবার আলী বলেন, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তার উপর বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ হয় ৫-৬ মণ। জমির পাট কেটে তা জাঁগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ খরচ, তাতে খরচ মিটিয়ে মণপ্রতি পাটের দাম পড়ে ২ হাজার টাকার বেশি। কৃষক আছালত শেখ বলেন, পাট পচনের খাল-বিলের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। আবার কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাঁগ দেওয়া ও আশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়। তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই। প্রতিবছর মণপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ২ হাজার থকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাঁধ বাজার গ্রামের কৃষক মীর্জা শেখ বলেন, গত দুই বছর ধরে ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে জাঁগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তার উপর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করি। এতে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি।