ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্তিত্ব বিলীনের পথে আজমিরীগঞ্জের গণগ্রন্থাগার

অস্তিত্ব বিলীনের পথে আজমিরীগঞ্জের গণগ্রন্থাগার

একসময়ের ভাটির রাজধানীখ্যাত হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। দেশজুড়ে নৌবন্দর ও দেশীয় মাছের জন্য সুনামের পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতিতেও ছিল বেশ সমৃদ্ধ। যে কোনো সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে নিয়মিত ছিল সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা। সেই সুবাদে ১৯৮৫ সালে সরকারি উদ্যোগে গরুর বাজার এলাকায় তৎকালীন সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও খাদ্যগুদাম সংলগ্ন প্রায় দেড় একর জায়গায় নির্মিত হয় আজমিরীগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি। পরের বছরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই নিয়মিতভাবে সংস্কৃতিচর্চা, বিভিন্ন প্রখ্যাত লেখকদের লেখা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বই, সনেটসহ বিভিন্ন বই পড়া এমনকি প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে জাতীয় দিবসে আলোচনাসহ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চায়ন এমনকি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতো এই পাবলিক লাইব্রেরিতে। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে কর্তৃপক্ষের অদেখা আর অবহেলায় সেই কর্মচঞ্চল প্রতিষ্ঠানটি এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এ যেন এক বৃদ্ধ, যে কিনা ধ্বংসের প্রহর গুনছে একাকী।

সরজমিন দেখা যায়, বটগাছের ডালপালা ঘিরে রেখেছে পুরো বিল্ডিংটি। পলেস্তারা খসে পড়া দেয়াল ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই ভবনটিতে। দেয়াল ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে গাছের লতাপাতা। সাপ-বিচ্ছুর বসবাস আর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে গণগ্রন্থাগারটি। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ফ্যান, লাইট, আসবাবপত্র ও সংরক্ষিত প্রখ্যাত লেখকদের হাজারও বই এবং মুল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। লোকজনের পদচারণা না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে গণগ্রন্থাগারটিতে। আজমিরীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক জীবন চন্দ্র চন্দ জানান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলাটি একটি প্রাচীন জনপদ। সাহিত্য সংস্কৃতিতে এ অঞ্চল ছিল সমৃদ্ধ। বর্তমান সরকারের আমলে অবহেলিত ভাটির জনপদে এখন যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতির তেমন উন্নয়ন হয়নি। উপজেলার একমাত্র সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র উপজেলা গণগ্রন্থাগারটি ভেঙে পড়ে আছে। এটি সংস্কার করা হলে নতুন প্রজন্ম সাংস্কৃতিচর্চায় আগ্রহী হবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান জানান, এটি এখন বিধ্বস্ত এবং এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগও আমরা আপাতত নিচ্ছি না। তবে এই জায়গাটিতে একটি সাংস্কৃতিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য আমরা আবেদন করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত