চিলমারীতে বাল্যবিয়ে বাড়ছে

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এমএন হুদা (চিলমারী) কুড়িগ্রাম

বিশ্বমারী করোনার শুরু হবার পর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিয়ের প্রভাব পড়েছে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিগত এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম ফিলাপ করার পরও বাল্যবিয়ের শিকার মোট ২২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। উপজেলার থানাহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে, ২০২৩ ইং সালের এসএসসি পরীক্ষায় মোট ৭৬৩ জন ছাত্রীর পরীক্ষা দেবার কথা থাকলেও ৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। এরা হলো, থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিতা খাতুন ও সুলতানা আক্তার আলিফা, চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আরফিনা আক্তার, রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জান্নাতি আক্তার, বালাবাড়ি হাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জেমী আক্তার, চিলমারী কনান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাথী খাতুন, মাটিয়াল বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আদুরি আক্তার, মুদাফৎথানা এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমা খাতুন, বজরা তবকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা আক্তার, নটারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতেমা আক্তার ও মর্জিনা আক্তার। এছাড়াও রাজারভিটা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে বিগত দাখিল পরীক্ষায় মোট ৩৬৬ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা থাকলেও একজন ছাত্র ও মোট ১৩ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। সরেজমিন, পাত্রখাতা রিয়াজুল দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী তাহমিনা আক্তার কল্পনার বাড়ি পাত্রখাতা ব্যাপারীপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সে শ্বশুরবাড়িতে সংসার পেতেছে। মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিলেন কেন জানতে চাইলে, তাহমিনা আক্তার কল্পনার বাবা বলেন, মনে মনে একজন কোরআনে হাফেজ পাত্র খুঁজছিলাম। হঠাৎ উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকার হাফেজ রনি আমার মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। অবশ্য তাহমিনা আক্তার কল্পনার মা ভিন্ন কথা বলেন। মাসুমা আক্তার জানান, এক বছর পূর্বে তার পিতা নওশাদ আলী তাকে হঠাৎ বিয়ে দিয়ে দেয়। পরীক্ষার পূর্বে সন্তান প্রসব করায় তার পক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি। উপজেলার বিজয়নগর এলাকার আব্দুল আলিমের কন্যা সুলতানা আক্তার আলিফা থানাহাট পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। এক বৎসর পূর্বে তার বিয়ে হয়েছে। পরীক্ষার পূর্বেই সে গর্ভবতী ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগের রাতে তার সিজারিয়ান পুত্র সন্তান জন্ম নেয়ায় আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুকনুজ্জামান শাহীনের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, চিলমারী অত্যন্ত দরিদ্রপীড়িত এলাকা। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা দায়মুক্তির জন্য এ ধরনের কাজ করে থাকে। কোনো কোনো সময় বাল্যবিয়ে দিয়ে ছেলে ও মেয়েপক্ষ সেটা গোপন রাখে। কিন্তু পরে সেটা প্রকাশও হয়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না।