জয়পুরহাটে ধুমধাম করে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

চারিদিক বিভিন্ন রকম আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ঢাকঢোল আর সানাইয়ের সুর বাজছে। উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই। পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। বিভিন্ন রকম সাজানোর জিনিস দিয়ে হয়েছে ছাদনাতলা। এক পলক বিয়ে দেখার জন্য ভিড় করছেন অনেকেই। বিয়ের আয়োজনের কোনো কিছুর কমতি নেই। শুভ লগ্নের অপেক্ষা। সেই শুভ লগ্নের সময় এল। বিয়েও হলো। তবে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ে ঘিরে। গত শুক্রবার সকাল থেকে রাত ৯টা পযন্ত জয়পুরহাট পৌরশহরের তাজুরমোড় সোনারগাঁ এলাকায় এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে আশপাশের প্রায় শতাধিক পরিবার অংশ নেন। এদিন সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। চলে রাত পর্যন্ত। বটপাকুড়ের বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন ধীরেন চন্দ্র মহন্ত আর ছেলের বাবা ছিলেন একই এলাকার বাবু দাস। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত গোপী চক্রবর্তী। কন্যাদান (বটগাছ) করা ধীরেন চন্দ্র মহন্ত সাথে কথা হয় ঢাকা মেইল এর প্রতিবেদকের সাথে তিনি বলেন, ‘আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। কোনো দিনও সেই বিয়ে দেখিনি। দুই বছর আগে রোপণ করা বৃক্ষ দুটো সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠেছে। আজকে নিজেই কন্যার বাবা হিসেবে বটগাছকে সম্প্রদান করছি। আমাদের পরিবারের সবার মঙ্গল কামনায় এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলের বাবা (পাকুড় গাছ) বাবু দাস বলেন, ‘বৃক্ষ আমাদের ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়। আমরা দুজন মিলে বট-পাকুড় গাছ দুটি এখানে রোপণ করি। আজকে সেই গাছেরই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বৃক্ষ দুটি যেন শত শত বছর ধরে বেঁচে থাকে এবং মানুষের মঙ্গল করে। এর মাধ্যমে আমাদের সব মঙ্গল হবে। আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিপদ-আপদ দূর হবে। দেশের মঙ্গল হবে।’ বিয়ে দেখতে আসা বৃষ্টি রানী মহন্ত বলেন, ‘আমি ছোট থেকে শুনে এসেছি বট-পাকুড়ের বিয়ে হয় কিন্তু কোনদিন দেখা হয়নি। আজকে দেখার সুযোগ হলো। আমার শ্বশুর বট গাছের পিতা হিসেবে কন্যা দান করেছে। আমার শ্বশুরের কোনো কন্যা সন্তান নেই, তাই তিনি অনেক দিনের ইচ্ছে টা পূরণ করলো। সেইসঙ্গে আমাদেরও দেখার সুযোগ হলো। অনেক অথিথি এসেছেন। অনেক আনন্দ করলাম। হিন্দু শাস্ত্র মতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখতে এসেছেন শিপন চন্দ্র সরকার কথা হলে তিনি বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে।’ আমি শুনেছি কিন্তু দেখা হয়নি বিয়ে, তাই দেখার জন্য অনেক দূর থেকে এসেছি। আমার মত অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। অনেক ভালো লাগল।