কেশবপুরে নিয়োগ বিরোধে প্রধান শিক্ষককে হুমকি

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে মহাদেবপুর রেজাকাটি বগা সেনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ পদের নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মো. মুক্তালিব আলীর দুই পা কেটে হাতে ক্রেস ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন এমপির এপিএস আলমগীর ছিদ্দিক টিটো।

গত ২২ জুলাই রাত ৯টায় সাগরদাঁড়ির মধুপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিকারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর ও তালা উপজেলার সীমান্তবর্তী মহাদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কর্মচারীর চারটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ২০২২ সালের ১২ সেপ্টম্বর বিদ্যালয়ের সভাপতি মনোনীত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমীন। তিনি ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভায় ওই ৫টি পদে নিয়োগ দিতে প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে এলাকাবাসীর বিরোধ শুরু হয়। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবুল হোসেন বলেন, নিয়োগ জটিলতায় বিদ্যালয়ের পড়াশুনা চরমভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

এ কারণে গত ২৩ জুলাই অভিভাবক মনিরুজ্জামানসহ এলাকাবাসী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার দাবিতে প্রধান শিক্ষককে পত্র দিয়েছেন। এরপরও স্কুলের নিয়োগের ব্যাপারে এমপির এপিএস আলমগীর ছিদ্দিক টিটো প্রধান শিক্ষককে তলব করেন।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম বলেন, এ উপজেলার সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ এমপির প্রতিনিধি হিসেবে টিটো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই স্কুল পরিচালনার স্বার্থে কর্মচারী পদে আশপাশের চার গ্রামের ছেলে-মেয়েদের নিয়োগের জন্য এলাকাবাসী তার কাছে দাবি জানায়। কিন্তু সে তা না মেনে নিয়োগ বোর্ড গঠনের চাপ অব্যাহত রাখেন। নিয়োগ প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছে, কর্মচারীর চারটি পদে নিয়োগের নামে সে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে। কিন্তু নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ স্কুল ফান্ডে কোনো অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় আমাদের সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয়।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মো. মুক্তালিব আলী বলেন, এপিএস টিটো আমার কাছে নিয়োগ সম্পন্নের কথা বললে, আমি তাকে জানাই স্কুলের ফান্ডে কোনো অর্থ নেই, কীভাবে নিয়োগ বোর্ড গঠন করব? এক পর্যায়ে আমি তাকে জানাই, পাঁচটি পদে নিয়োগে আপনি তো মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। তা থেকে নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ স্কুলের ফান্ডে ১৫ লাখ টাকা দেন। এ কথা শুনেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ আমার দুই পা কেটে নিয়ে হাতে ক্রেস ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, আমাকে বাজারে উঠতে দেবে না বলেও সে শাসিয়ে যায়। আমি ভয়ে ভয়ে স্কুলে যাওয়া-আসাসহ অফিসের কাজ করছি। এ কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তিনি ২৪ জুলাই প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

এ ব্যাপারে আলমগীর ছিদ্দিক টিটো বলেন, আমি নিয়োগ জটিলতা নিরসনে সেখানে যাই। ওই নিয়োগে সভাপতির একজন প্রার্থী রয়েছে, বাকি প্রার্থী সব তাদের মনোনীত। আমি নিয়োগ বোর্ড গঠনে তাদের ৫ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে।

এতে আমার রাগ হয়ে গিয়েছিল। তাই একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট উপজেলা নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিরসনের দায়িত্ব নিয়েছে।