ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মধুপুরে আনারসের বাজারে ধস

চাষিদের মাথায় হাত
মধুপুরে আনারসের বাজারে ধস

বাংলাদেশে আনারসের রাজধানী হিসেবে সুপরিচিত টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলাকেই সবাই জেনে থাকে। রসে ভরা, সুমিষ্ট স্বাদ আর চমৎকার সুঘ্রাণের জন্য বিখ্যাত এই মধুপুর এলাকার আনারস। দেশের উৎপাদিত মোট আনারসের সিংহভাগই এখানে উৎপাদিত হলেও অবহেলা ও সঠিক পরিকল্পনা, পরিচর্যার অভাব এবং বিভিন্ন সময় অসময়ে আনারসে বিভিন্ন প্রকার মেডিসিন প্রয়োগের ফলে এ এলাকার আনারসের সুনাম হারিয়ে যেতে বসেছে। স্থানীয় আনারস চাষিরা জানান, ভরা মৌসুমেও ক্রেতা স্বল্পতার কারণে আনারস কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বাগান থেকে তুলে বাজারে নেওয়ার পর সেগুলো আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া এ মৌসুমে বিভিন্ন প্রকার ফল বাজারে থাকার কারনে ক্রেতাদের মধ্যে আনারস কেনায় অনিহা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন চাষিরা। আর এ কারণে চাষিদের মধ্যে আনারস চাষের আশঙ্কা বিরাজ করছে। তারা জানান, এবার শ্রমিক খরচ ও সারের দাম বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে আনারস চাষের খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে ভর্ধেক দামে। মধুপুরের প্রধান বাজার জলছত্রসহ গারো বাজার, মোটের বাজার সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অল্প কয়েকজন পাইকার আনারস কিনতে এসেছেন। চাষিদের আশানুরুপ দাম তারা করছে না। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, এ বছর মধুপুরে ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া প্রতি হেক্টরে ৩৮ থেকে ৪০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান। জুলাই-আগস্ট এ ২ মাস আনারসের মৌসুম ধরা হলেও, এখন প্রায় সারাবছরই বাজারে পাওয়া যায় মধুপুরের আনারস। এখানে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় জায়ান্ট কিউ জাতের আনারস, যা এখানকার চাষিদের কাছে ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। গারো বাজোরের আনারস চাষি মো. সাজ্জাদ রহমান জানান, গত বছর যে আনারস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি এ বছর ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি দিয়ে নিতে চাচ্ছেন না পাইকাররা। কারণ হিসেবে বলছেন চাহিদা কম। সিরাজগঞ্জ থেকে আগত পাইকার হামিদ মিয়া বলেন, ‘মানুষ এবার আনারসের কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। মনে হয় সাধারণ মানুষের হাতে টাকা-পায়সা নেই। এদিকে পরিবহণ খরচও বেড়ে গেছে। তাই লোকসান এড়াতে এবার কম ফল কিনছি। বাজার চাহিদা যেমন থাকবে সে অনুযায়ী আমরা ফল কিনব। তিনি বলেন, আগে যেখানে ২ দিনে ৫ হাজার আনারস বিক্রি করতে পারতাম, এখন সেখানে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০টি আনারস বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আশা গ্রামের আনারস চাষি সোহেল রানা বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির প্ররোচনায় আনারস বড় করতে ও পাকাতে রাসায়নিক মেডিসিন ব্যবহার করছি আমরা অনেক কৃষক। গ্রোথ হরমোন ব্যবহারে আনারসের আকার বড় হলেও ভেতরে ফাঁপা ও পানসে হয়ে যায়। তাছাড়া ফল আরো বড় করার আশায় কৃষক অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহার করে। এছাড়া, পাকানোর জন্য রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে কয়েক দিনের মধ্যে আনারস হলুদ রং হয়ে যায়। এক সাথে সব আনারস এ রং ধারণ করলে বিক্রি করতে পারা যায় সহজে। কিন্তু যদি মেডিসিন না দেয়া হয় তাহলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অল্প অল্প সংখ্যক আনারস পাকে যার ফলে এক সাথে বিক্রি করা যায়না। কৃষকরা টাকাও ঘরে আনতে পারেনা ঠিকঠাক মতো। তারা বলেছেন, কৃষকরা বিক্রির নিশ্চয়তা আর ন্যায্য দাম পেলে আনারসে রাসায়নিক ব্যবহার করবে না। এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে মধুপুরের আনারস বিদেশে রপ্তানিও সম্ভব বলে মনে করছেন আনারসের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত