মোবাইল-মাদকে আসক্ত শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাগর আহম্মেদ, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পরীক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি জিপিএ-৫ ও পাসের হার। বেড়েছে শুধু ফেল করা শিক্ষার্থীর হার। শিক্ষাখাতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও শিক্ষাব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থায় উদ্বিগ্ন সর্বমহলের লোকজন। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, মোবাইল ও মাদকে আসক্ত শিক্ষার্থী। ফলে বাড়ছে বাল্যবিবাহও। তবে সব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার আরো উন্নয়ন চান কালিয়াকৈরবাসী। এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুন্দর সুন্দর ভবন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ শিক্ষাখাতের ব্যাপক উন্নয়ন ও শিক্ষার মনোরম পরীবেশ সৃষ্টি করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপির দিকনির্দেশনায় এখানকার শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নকাজ করে উপজেলা প্রশাসন। অথচ এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল এ উপজেলার ৫৬টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার মোট ৭ হাজার ৪২০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস ৪ হাজার ৯৯৯ জন, ৪৮০ জন জিপিএ-৫ এবং ফেল করেছে ২ হাজার ৪২১ জন। কিন্তু ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে পাস ৫ হাজার ২৮৫ জন, ৭০২ জন জিপিএ-৫ এবং ফেল ছিল ১ হাজার ৩২৪ জন। সে হিসাবে তুলনামূলক এবার পরীক্ষার্থী বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ ও পাসের হার দুটোই। গত বছরের চেয়ে বেড়েছে শুধু ফেল করা শিক্ষার্থী হার। সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের পরেও শিক্ষা ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সর্বমহলের লোকজন। তারা এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন, করোনার থাবায় অনলাইনে ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ও মাদকে আসক্ত। ওই সময় অনলাইনে ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন গেইম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝুঁকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আর এভাবেই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শুধু আসক্তই নয়, মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে তারা গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্যবিবাহ। অপর দিকে মাদকের বিস্তর প্রভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। জনসচেনতার অভাব, অভিভাবক-শিক্ষককের দায়িত্বহীনতাসহ নানা কারণেও লেখাপড়া বিমুখ হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ হাজার ৪০০টির উপরে আই ট্যাব বিতরণ করেছে সরকার। এবার এসএসসি ফলাফল খারাপ হওয়ায় সেই আই ট্যাব নিয়েও দুশ্চিন্তায় অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তবে অভিভাবকরা ছেলেমেয়ের প্রথম শিক্ষক- উল্লেখ করে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে মিশে, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে কি না এবং ঠিকমতো লেখাপড়া করে কি না সেদিকেও খোঁজখবর রাখার অনুরোধ জানায় উপজেলা প্রশাসন। সারা দেশে এবার এসএসসি ফলাফল খারাপ উল্লেখ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোল্লা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর সিলেবাস বেশি ছিল। করোনার প্রভাব, অভিভাবক ও শিক্ষক সেভাবে পারফমেন্স করেনি। তবে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছুতে আসক্ত হয়েও কম লেখাপড়া করায় পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট ভালো করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা মোবাইল দেখতে দেখতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন কী, মোবাইল ব্যবহারে বাল্যবিবাহে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোররা। আবার মাদকাসক্তদের সঙ্গে মিশতে মিশতে শিক্ষার্থীরাও মাদকেও আসক্ত হচ্ছে।