মাধবপুরে বিলুপ্তির পথে জ্বালানি শিল্প গোমইট

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল হওয়ায় নারীরা বোরো ধান কাটার পর হাতে সময় নিয়ে গরু ও মহিষের গোবর দিয়ে গোমইট ও ছটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য তৈরি করে থাকেন। অদম্য মনোবল আর অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত এই দেশের মানুষ এসব কিছু সামলে নিয়েই যুগ যুগ ধরে চলছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই জ্বালানি শিল্প। হাওর-বাঁওড় নদীবেষ্টিত জনপদের এক সময়ের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় বাড়ির আঙিনাজুড়ে গবাদিপশুর গোবর এবং বাঁশের টুকরো কিংবা জলাভূমিতে গজিয়ে উঠা ঢোল কলমি’র শাখার সঙ্গে ধানের চিটা, ভূষি অথবা খড়ের সাহায্যে তৈরি গোমইট (বাঁশের টুকরো, পাটকাঠি, ধানের নাড়া উপর গোবরের প্রলেপ দিয়ে তার উপর ধানের চিটা বা ভূষি ছিটিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরণের জ্বালানি) এবং গোবর ছটা (ধানের খড় বিছিয়ে তার উপরে গোবর লেপে দিয়ে এরপর ধানের চিটা বা ভূষি ছিটিয়ে গোলাকৃতি বা চৌকোনা আকৃতির করে কেটে তৈরি এক বিশেষ ধরনের জ্বালানি) শুকোতে দেয়া হত। বাড়ির সব বয়সি সদস্যদের অংশগ্রহণে তৈরি এই জ্বালানি শুকিয়ে যাওয়ার পর স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা বসতঘরের বাঁশের কিংবা ইকরের (বিশেষ ধরনের গাছ) বেড়ার সঙ্গে রাখা হত। এই গোমইট বা গোবর ছটা তৈরিতে নতুনত্ব নিয়ে আসার জন্য এর নির্মাতারা এগুলোর বিভিন্ন আকৃতি দিতেন যা ছোট-বড় সবাইকে আকর্ষণ করত। সবার মধ্যে এসব আকৃতিতে জ্বালানি তৈরির আগ্রহী মাধবপুর উপজেলার বুল্লা, ছাতিয়াইন, আন্দিউড়া, শাহজাহানপুর, বহরা, চৌমুহনী, মনতলা, ধর্মঘর। এক সময় বছরের বিশেষ মৌসুমে জ্বালানি হিসেবে এগুলো (গোমইট এবং গোবর ছটা) ব্যবহার করতেন। মিল ফ্যাক্টরির সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উন্মুক্ত গোচারণবুমি ক্রমেই সংকোচিত হওয়ায় বনভূমি কমে গেছে অনেক। বৃহত্তর সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এখনও এই জ্বালানি শিল্পের (গোমইট এবং গোবর ছটা) দেখা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানের জয় যাত্রায় বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সিলিন্ডারের প্রচলনে জনজীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিকল্প জ্বালানির সন্ধান পাওয়ায় এখন আর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙিনা কিংবা রাস্তার কিনার ঘেঁষে সারি বেঁধে রাখা গোমইট এবং গোবর ছটার দেখা যায় না। তাছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে সফল বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনার ফলে এখন জ্বালানি কাঠের সংকট ক্রমেই দূর হচ্ছে। তবুও প্রত্যন্তÍ এলাকায় যেখানে সড়ক যোগাযোগ ততটা আধুনিক নয়, কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছানোর সুযোগ নেই, সেখানে টিকে আছে এই জ্বালানি শিল্প।