ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাচ্ছে মাটির ঘর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাচ্ছে মাটির ঘর

মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায় বগুড়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। বগুড়ার শেরপুর. কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, শিবগঞ্জ এলাকার নব্বই ভাগ মানুষের ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষার হার বাড়ার কারণে এসব এলাকায় মাটির ঘর বিলুপ্ত হতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ওইসব এলাকায় মাটির ঘরের জায়গায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা দালান। বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চান না। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল মানুষজন এখন পাকা দালানের দিকেই ঝুঁকে পড়েছেন। এতে করে দ্রুতই বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গরিবের রাজপ্রসাদ’ খ্যাত মাটির ঘর। কাহালু উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়িতে মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে দেখা গেছে দালান ঘর ও সেমিপাকা টিনের ঘর। এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এটেল মাটি পাওয়া যেত, সেইসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর তৈরি করত। লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে প্যাক করা হতো। সেই মাটি দিয়ে তৈরি হতো ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার ১ থেকে ২ ফুট উচু করে দেয়াল তৈরি করে সেই দেয়ালকে ৫ থেকে ৬ দিন রোদে শুকানো হতো। তারপর এই দেয়াল আবারও ১ থেকে ২ ফুট উঁচু করে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। তারপর এই দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে চালা (ছাউনি) নির্মাণ করা হতো। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে সময় লাগত প্রায় ২ থেকে ৩ মাস। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের দিকে ধানের তুষ (কুড়া) দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেয়া হয়। বাইরের দিকে দেয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। চুনের প্রলেপ দিলে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়ত, তেমনি ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকেও মাটির দেয়াল রক্ষা পেতো। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকত। মাটির ঘর নির্মাণের কারিগরদের বলা হয় ‘দেয়ালি’। উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের দেয়ালি মাহফুজার জানান, মাটির বাড়ি তৈরি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিক মাস। কারণ, এ সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি হাত ঘর নির্মাণে ২০ টাকা করে নিতাম। আবার অনেক সময় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করে দিতাম। ‘মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করে না, যার জন্য আমরা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি।’ নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় মাটির ঘরেই বসবাস করেছি। মাটির ঘরে বসবাস খুবই আরামদায়ক। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে শীত লাগত না। তিনি জানান, তাদের বাড়িতে সাতটি বড় মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে একটি ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলো ভেঙে সেখানে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির ঐতিহ্য হিসেবে এখনো প্রায় শতবর্ষ পুরোনো একটি মাটির ঘর রাখা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত