ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জীবন সংগ্রামে হেরে যাচ্ছেন রুমা

জীবন সংগ্রামে হেরে যাচ্ছেন রুমা

যেখানে তিন বেলা খাবার জোগানোই সম্ভব নয় সেখানে ওষুধ কেনাটা যেন বিলাসিতা। একটি প্রতিবন্ধীসহ দুটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন পার করছেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার পুরোনো রেলস্টেশন পাড়ার বাসিন্দা অসুস্থ রুমা বেগম। বয়সের কথা বলতেই হিসাব কষে পারলেন না বলতে। জীবন সংগ্রামের হিসাব মেলাতে না পেরে যেন সব হিসাব তার এলোমেলো। স্থানীয় বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে বড় ছেলে হৃদয় হাসান (১৭) এর অনিয়মিত আয় গড়ে দৈনিক ১০০ টাকার কম। এই সামান্য আয় এবং প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে বুলেট (১৫) এর ত্রৈমাসিক ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কোনো রকমে তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তাদের। এর ওপর প্রতিবন্ধী ছেলের গোদ রোগের চিকিৎসা ও নিজের পিত্তথলির পাথর এবং হার্টের অসুখের চিকিৎসাও করাতে হয়। প্রায় ১২ বছর আগে মূলত শুরু হয় রুমা বেগমের জীবন সংগ্রাম। সেই সময় আনন্দের সংসারে মেঘকালো করে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রুমা বেগমের স্বামী। মৃত্যুর আগেই স্বামীর চিকিৎসার পেছনে কয়েক দফা খরচে ২ শতক ভিটে বাড়ি বাদে পরিবারের সর্বস্ব বিক্রি করে দিতে হয়। বড় ছেলে জেএসসি পাস করলেও অর্থের অভাবে বন্ধ হয় লেখাপড়া। ছোট ছেলেকে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করালেও গোদ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। প্রতিবন্ধী ছেলেকে সাথে নিয়েই অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন রুমা। কিন্তু সেখানেও বিধি বাম। অসুস্থ ছেলের চিৎকার-চেঁচামেচিতে অতিষ্ট হয়ে অনেকেই তাকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে তার নিজের শরীরেও। পিত্তথলিতে পাথর, টিউমারসহ দেখা দেয় হার্টের সমস্যা। এ অবস্থায় আর ঝিয়ের কাজ করতে পারেন না। নানাজনের কাছে হাত পেতে জরুরি অবস্থায় টিউমার অপারেশন করেন। অর্থের অভাবে কোনো রোগেরই ওষুধ কিনতে পারেন না তিনি। শেষ করতে পারেননি স্বামীর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত বাড়ির কাজ। ঘরের চাল থাকলেও বেড়ার জায়গায় ঝুলে আছে শুধুমাত্র কয়েক টুকরো কাঠ। খোলা ঘরেই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পার করছেন রাতের পর রাত। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলেও মেলেনি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। রুমার প্রতিবেশী ছেলিনা বেগম বলেন, আমরা এলাকার অনেকেই সাধ্যমতো এই পরিবারটিকে সহায়তা করছি। কিন্তু তাদের তিনজনের ভরণপোষণে তা যথেষ্ট নয়। তাই তার বড় ছেলেকে কেউ একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটি তিন বেলা দুমুঠো খেতে পারত বলে মনে করি। রুমার দেবর নজরুল ইসলাম দুখু জানান, আমাদের নিজেদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবুও তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। অসহায় রুমার পরিবারটিকে বাঁচাতে তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল মালেক বলেন, লোকমুখে পরিবারটির বিষয়ে জেনেছি, তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত