স্কুলের ৪২ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ৩৪ জনই বাল্যবিয়ের শিকার

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

করোনার প্রকোপ কমলেও থেমে নেই বাল্যবিয়ের প্রকোপ। বাল্যবিয়ের প্রকোপে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৪২ জন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষা দিয়েছিল মাত্র আটজন। এই আাটজনের মধ্যে পাস করেছে মাত্র চারজন। বাকি ৩৪ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অংশই নেয়নি পরীক্ষায়। পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় ঘটায় চাঞ্চল সৃষ্টি করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বোয়ালমারী দ্বি-মুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহসড়কে বোয়ালমারী বাজারের পাশেই বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রামীণ পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। রয়েছে খেলাধুলার মাঠ। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৪ সালে। ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ২০২২ সালে একটি নতুন ভবনও স্থাপন করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদানের সাথে সংযুক্ত আছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভালো থাকলেও এ বছর শিক্ষার মান ও হার বিপর্যয় ঘটেছে। এর কারণ হচ্ছে বাল্যবিয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণির ১০ শিক্ষার্থীর গোপনে বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের গোপনে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা আরো বলেন, প্রতিনিয়ত বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে এ এলাকায়। বিদ্যালয়ের পাশের উত্তর বোয়ালমারি, দক্ষিণ বোয়ালমারী, ছোপাগজসহ এই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রতিনিয়ত নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাতের আঁধারে এলাকায় কিংবা অন্য কোনো গহীন এলাকায় নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অমতে বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। বাল্যবিয়ের প্রবণতার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যতাকে দায়ী করা হচ্ছে। বোয়ালমারী গ্রামের হাজেরা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, আমরা গরিব লোক। ভালো ছেলে পেয়েছি তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারি না। অভিভাবকরা শিক্ষকদের দায়ী করে বলেন, শিক্ষকদের দায়িত্বের অবহেলার কারণেই এএমনটি ঘটছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে সত্য। এটায় শুধু শিক্ষকদের সমস্যা নয়, অভিভাবকদেরও সমস্যা। নিজেদের অর্থায়নের শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ করিয়েও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভাড়াও দিই। তারপরও অভিভাবকরা মেয়েদের অল্প বয়সে গোপনে বিয়ে দেন। অভিভাবকরা সচেতন নয়। বিদ্যালয়টির ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি আকবর আলী জানান, করোনাকালীন সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে দেয়া হয়েছে। এই এলাকার মানুষ সচেতন নয়। আমরা চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বোয়ালমারী এলাকায় একটি সিন্ডিকেট বাল্যবিয়ের সাথে জড়িত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। তেঁতুলিয়া কয়েকটি স্কুল ভালো করলেও বোয়ালমারী স্কুলের ঘটনাটি দুঃখজনক। আর যেন কোনো শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার না হয়, এই ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।