জমি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব

রাস্তা বন্ধ করে দিল এক পক্ষ কর্মহীন অর্ধশত পরিবার

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কামরুল হুদা হেলাল, দিনাজপুর

গাইবান্ধার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে জায়গা-জমি হারিয়েছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। বাধ্য হয়ে ২০২০ সালে পরিবার নিয়ে চলে আসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের হায়দারনগর (আবিরেরপাড়া) গ্রামে। সেখানে ৪ শতক জমি কিনে বসবাস করছেন। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে তার চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। শুধু আব্দুর রহমানই নয়, তার মতো ওই এলাকার অর্ধশত ভাঙারি ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আব্দুর রহমানের মতো গাইবান্ধার নদীভাঙন এলাকা থেকে গত ৩ বছরে অর্ধশত ভাঙারি ব্যবসায়ী পরিবার এই এলাকায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেছেন। সবাই জমি কিনেছেন ওই এলাকার তোজাম্মেল হক ও জুলফিকার আলীর কাছ থেকে। তোজাম্মেল হক ও জুলফিকার আলীর মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে গত ১৫ দিন আগে চলাচলের একমাত্র রাস্তায় সিমেন্টের খুঁটি, বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দেয় তোজাম্মেল হক। ফলে গত ১৫ দিন ধরে তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে। ফলে ভাঙারির কাজে ব্যবহৃত ভ্যান বের করতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অর্ধশত পরিবার। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় তোজাম্মেল হক ও জুলফিকারের কাছে থেকে জমি কিনে বাড়ি করেছে চরাঞ্চলের ৫০ পরিবার। জমি বিক্রির সময় যাতায়াতের জন্য রাস্তা দিয়েছে তোজাম্মেল ও জুলফিকার। এই রাস্তার মালিকানা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তোজাম্মেল হক রাস্তাটির মাঝে বেশ কয়েকটি জায়গায় সিমেন্টের খুঁটি পুঁতে দেয় এবং নতুন আম গাছের চারা রোপণ করে। এছাড়াও রাস্তার এক জায়গায় আম গাছের মোটা গুঁড়ি ফেলে এবং বাঁশের খুঁটি গেড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। এতে রাস্তাটি দিয়ে কোনমতে একজন মানুষ হেঁটে যাতায়াত করতে পারবে। এতে এসব ভাঙারি ব্যবসায়ী লোকজন রাস্তা দিয়ে ভ্যান নিয়ে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর আগেও দুই-তিনবার রাস্তায় যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তোজাম্মেল। স্থানীয়ভাবে আলোচনার পর তা পরে খুলে দিয়েছিল। স্থানীয় ভুক্তভোগী ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, আমরা নদীভাঙন এলাকার মানুষ। জায়গা কেনার সময় মালিকরা রাস্তা বের করে দিয়েছে। এখন দুই মালিকের নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে রাস্তা বন্ধ করে রাখছে। ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম (৫০) নামে এক নারী বলেন, আমরা সবাই ভাঙারি ব্যবসা করে দিন আনি দিন খাই। ১৫ দিন থেকে আমার বাড়িওয়ালা ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছে না। সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে আমাদের। এ ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী তোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। তবে জুলফিকার আলী বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় জায়গাগুলো বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করেছি। জায়গা বিক্রির সময় আমরা রাস্তার জন্য জায়গা দিয়েছি।

তোজাম্মেল হকও জায়গা বিক্রির সময় রাস্তার জায়গা ছেড়েছিল। কিন্তু তিনি এখন সেই জায়গাগুলো নিজের বলে দাবি করে রাস্তায় বেরিকেড দিয়েছে। ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য বলেছি। কোনোভাবেই মানুষের যাতায়াত বন্ধ করার বা ব্যাঘাত সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে না পারলে, আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং চলাচলের রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হবে।