ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সেচকাজে ব্যবহার ‘জাদুর বাক্স’

৭০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়
সেচকাজে ব্যবহার ‘জাদুর বাক্স’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শিমশন সাহা শিমু নামে এক ব্যক্তি এবার কৃষিতে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের পাওয়ার ডিভাইস উদ্ভাবন করে রিতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি এই যন্ত্রের নাম দিয়েছেন জাদুর বাক্স। সাধারণত ফোর হর্স সাইজের ছোট একটি শ্যালো মেশিন ও ৩ ইঞ্চি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লিটার পানি উত্তোলন করা যায়। সেখানে এই পাওয়ার ডিভাইসটি একই মেশিন ও পাম্পের সঙ্গে জুড়ে দিলে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ লিটার পানি উত্তোলন করা সম্ভব। এতে সময়ের পাশাপাশি ৭০ শতাংশ জ্বালানি তেল সাশ্রয়ী হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং সরকারের আ্যসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) পরীক্ষায় যার প্রমাণ মিলেছে, মিলেছে সনদও। তবে অর্থাভাবে ও সরকার কিংবা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে থমকে আছে তার এই বিষ্ময়কর উদ্ভাবন। শিমুর এই ডিভাইসটি সরকারি অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে সারাদেশে যে জ্বালানি সংকট তা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষিতে তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার হলে অনেকাংশে কমে যাবে ফসল উৎপাদন খরচ। এতে কৃষক, সরকার উভয়ই লাভবান হবে। জানা গেছে, এলাকার একটি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে শিমশন সাহা শিমু চট্টগ্রামে যান। সেখানে একটি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। কাজ শুরু করেন চট্টগ্রামের একটি মেশিনারিজ কারখানায়। সেখান থেকে রপ্ত করেন বিভিন্ন মেশিন মেরামতের কাজ। ১৯৯৭ সালে নিজ গ্রামে এসে শুরু করেন নষ্ট শ্যালো মেশিন মেরামত ও ইরি ধানের ব্লকে সেচ দেওয়ার কাজ। কিন্তু প্রায় সময় জ্বালানি তেলের সংকটে বন্ধ হয়ে যেত ধানের জমিতে সেচ দেওয়া। পরে নিজের ব্যবহৃত বাইসাইকেল প্যাডেল করে উদ্ভাবন করেন জ্বালানি ছাড়াই সেচযন্ত্র। কিন্তু সেটি অনেক কষ্টসাধ্য হওয়ায় আর আগ্রহ বাড়াননি শিমসন সাহা শিমু। পরে দীর্ঘ আট বছরের চেষ্টা ও পরিশ্রমে তৈরি করে ফেলেন এই মেকানিক্যাল পাওয়ার ডিভাইসটি। যা যেকোনো সেচ পাম্পের সাথে জুড়ে দিলে ৭০ পার্সেন্ট জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ডিভাইসটি তৈরি করে সে বছরই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষিতে অবদান রাখায় পুরস্কার পান তিনি। এরপর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে আবেদন করেন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে এটুআই ও বুয়েটে পরীক্ষায় পাঠানো হয় তার এই ডিভাইসটি।

পরীক্ষায় ডিভাইসটির কার্যকারিতার প্রমাণ মিললে পান সনদও। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট বিভাগ এই মেকানিক্যাল পাওয়ার ডিভাইসটির অনুমোদন ও শিমসন সাহা শিমুকে উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কাদের বলেন, এই ডিভাইসটি সেচ পাম্পে ব্যবহৃত হলে ফসল উৎপাদন খরচের পাশাপাশি কৃষকের সময় বেঁচে যাবে। যেখানে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে এক ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে সময় লাগবে ২৫ মিনিট। পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে ৭০ পার্সেন্ট। এতে কৃষক ও সরকার উভয়ে লাভবান হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত