ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে সিন্ডিকেট

জিম্মি রোগীরা

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এমদাদুল ইসলাম ভুট্টো, ঠাকুরগাঁও

দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলার চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলার প্রায় ৫-৬ শতাধিক রোগী। অন্যান্য বিভাগে একাধিক ডাক্তার থাকলেও সার্জারি বিভাগে শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক। এক সার্জারিনির্ভর হওয়ায় গরিব মানুষের পকেট কাটছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। আর এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে ডা. শিহাব মাহমুদ শাহিয়ার সুজনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অভিযোগ তুলে ডাক্তার শিহাবকে নিয়ে নর্দান মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রোগীর স্বজনরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন ইসমা আক্তার বলেন আমরা সিহাব স্যারকে দেখাইছি, তিনি বলেন কিডনিতে স্টোন। এটা অপারেশন লাগবে। এই অপারেশন হাসপাতালে হবে না, মেশিনে করতে হবে। ক্লিনিকে ভর্তি হই। সে মোতাবেক নর্দান মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করাই। ক্লিনিকে অপারেশন শেষে বলে এটা ওপেন হয়েছে। ক্লিনিকের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয় ২২ হাজার টাকা কিন্তু পরবর্তীতে আরো ৪ হাজার টাকা দাবি করলে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় নিতে হয়। ওষুধ পত্রসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে রোগী অসুস্থ হয়। পরে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। শহরের আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা নাজমা আক্তার মিম বলেন, আমার মাকে ডাক্তার শিহাবের চেম্বারে দেখাই। তিনি বলেন গলব্লাডারে পাথর। আমরা প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হই। পাঁচ দিন থাকার পরেও বিভিন্ন অজুহাতে অপারেশন না হলে পরে ক্লিনিকে ভর্তি করাই। কিন্তু ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে অপারেশন হয়? তাহলে তিনি কীভাবে অপারেশন করলেন? তিনি আরো বলেন, ডাক্তার শিহাবের ব্যবহার খুবই খারাপ, তিনি মানুষকে মানুষই মনে করেন না। তিনি ডাক্তার হয়েছে শুধু টাকা ইনকাম করার জন্য। রোগী আশিক (২০) বলেন, আমরা গরিব মানুষ, আমার বাবা ভ্যান চালায়, এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি কিন্তু ওনারা তো কোনো প্রদক্ষেপই নিলেন না। মনে হয় সবাই জিম্মি হয়ে গেছে। আর এমন চিত্র শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়। শত শত রোগীর একই কথা। নর্দান মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মিঠু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জয় চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ দিশাহারা অবস্থায় হাসপাতালে আসে চিকিৎসা নিতে কিন্তু একটি দালাল চক্র, সিন্ডিকেট চক্র এই সরলতার সুযোগ নিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।