ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ড্রাগন ফলে টনিক ও হরমোন স্প্রে ব্যবহার

স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা
ড্রাগন ফলে টনিক ও হরমোন স্প্রে ব্যবহার

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক এমনকি বিদেশ ফেরত ব্যক্তি ও বেকার যুবকদের কাছে লাভজনক ফসলের নাম ড্রাগন। প্রায় একদশক আগে এ ফলটির চাষ শুরু হয় কালীগঞ্জে। সময়ের সাথে বাড়তে থাকে এর ব্যাপকতা। অপরুপ রং এবং অসাধারণ স্বাদ ও ঔষধি গুনসম্পন্ন হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ড্রাগন ফল। বাজারে চাহিদা থাকায় ড্রাগন চাষিরা অধিক লাভবান হওয়ার আশায় বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ বাদ দিয়ে টনিকসহ বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগের দিকে নজর দিয়েছেন। ড্রাগন ফলের আকার বড় করতে অধিকাংশ ড্রাগন চাষি ইন্ডিয়ান ডক্টর ডানস ড্রাগন টনিক ব্যবহার করছেন। বর্তমানে অনেকেই টনিকের পরিবর্তে প্লানোফিক্স ও পাওয়ার ট্যাবলেট পানির সাথে মিশিয়ে ধরন্ত ফলে স্প্রে করছেন। ফলে ড্রাগন তার আসল লাল রং হারিয়ে লাল-সবুজে পরিণত হচ্ছে। রাসায়নিক এসব পদার্থ স্প্রে করা ফল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা নিয়ে ক্রেতা সাধারণের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ড্রাগন ফল ধীরে ধীরে যখন সাধারণ মানুষের কাছে পছন্দের একটি ফলের তালিকায় যোগ হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে কতিপয় অসাধু কৃষক গাছে ফলটি থাকা অবস্থায় দ্রুত বড় করার জন্য হরমোন স্প্রে করছেন। কালীগঞ্জে প্রথম দিকে হরমোনের ব্যবহার কম দেখা গেলেও দিন যত যাচ্ছে এর ব্যবহার ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষিরা জানান, টনিক ও হরমোন ওষুধ পানির সাথে মিশিয়ে গাছে ফুল ফোটার কয়েক দিন পরই স্প্রে করা হচ্ছে। স্প্রে করার ফলে একেকটি ফল ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ উপজেলার ২১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে। আর হেক্টর প্রতি ২৬ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন করে তা বাজারজাত করছেন চাষিরা। ড্রাগনের চাষ সব থেকে বেশি উপজেলার পৌর এলাকার শিবনগর, চাঁচড়া, মালিয়াট কাষ্টভাঙ্গা ও রায়গ্রাম এর মাঠে। একেকজন কৃষক দুই বিঘা থেকে শুরু করে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ড্রাগনের চাষ করেছেন বলেও জানা যায়। ঝিনাইদহ জেলা ড্রাগন চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসএম টিপু সুলতান জানান, ড্রাগন চাষে ক্ষতিকর এবং অনুমোদনহীন টনিক কিংবা হরমোনের ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে চাষি, এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মকর্তার সাথে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলম রনি বলেন, ড্রাগন চাষে গোপনে টনিক ব্যবহার হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে আমরা ড্রাগন চাষিদের প্রাকৃতিক ও জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

মাত্রাতিরিক্ত টনিক ব্যবহার শুধু ড্রাগন কেন, সব ফলের জন্যই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল খাদ্য হিসেবে অনিরাপদ হতে পারে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ওই ফলকে অনিরাপদ বলা যাবে না। ঝিনাইদহ জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাধন সরকার বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ড্রাগন ফলের বাজার মনিটরিং করছি। যেহেতু টনিক বা হরমোন স্প্রের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের ওজন বাড়ানো হচ্ছে। সেহেতু ওই ড্রাগন ফল ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা ঢাকা হেড অফিসে পাঠাব। আর তখনই কেবল বলা যাবে টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল নিরাপদ কি অনিরাপদ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত