ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শাপলা বিক্রি করে চলে কর্মহীন কৃষকের সংসার

শাপলা বিক্রি করে চলে কর্মহীন কৃষকের সংসার

মুন্সীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রান্তিক পর্যায়ের শতাধিক কৃষক। বর্ষা মৌসুমে শাপলা বিক্রি করে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের সংসারের খরচ মিটছে। বিনা পুঁজিতে দৈনিক ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা আয় করছেন একেকজন কৃষক। বর্ষার পানিতে টইটুম্বর মুন্সীগঞ্জের জেলার শ্রীনগর, সিরাজদিখানের খাল-বিল ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। সেখান থেকে শাপলা তুলে তা বাজারে বিক্রি করছেন এ অঞ্চলের কৃষক। চার মাস শাপলা বিক্রি করেই দেড় শতাধিক পরিবারের রোজগার হয় এবং বছরে বেশ কয়েক মাস সেই অর্থ দিয়ে তাদের সংসার চলে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার বর্ষার পানিতে ডুবে থাকা প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা উৎপন্ন হয়েছে। জৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত ৪ মাসব্যাপী চলে শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রির কার্যক্রম। অধিদপ্তরের এক গবেষণা অনুযায়ী বলা হচ্ছে, যথাযথ সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানি করা গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীনগরের আড়িয়াল বিলে বর্ষায় জমেছে পানি। এতে স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে শাপলা। আর এসব শাপলা ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকাতে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে আঁটি বাঁধছেন কৃষক। অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক সারিবদ্ধভাবে তুলছেন শাপলা। পরে একাধিক ভাসমান হাটে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। আড়িয়াল বিলের আলমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিলের পাশে স্তূপ করা রাখা হয়েছে শাপলা। আরেকটু এগিয়ে দেখা যায় নৌকা থেকে ঢাকায় পাইকারিভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে শাপলা তোলা হচ্ছে পিকআপভ্যানে। শুধু আলমপুর নয়, এমন চিত্র দেখা গেছে বিলের দয়হাটা, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, আলমপুর, কেউটখালী, মোহনগঞ্জ, কামারগাঁও, জগন্নাথপট্টি, কাঁঠালবাড়ী, মহতপাড়া এলাকায়। এসব এলাকায় এখন জমজমাট ভাসমান শাপলা বিক্রির হাট। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কাওরান বাজার থেকে পাইকারি শাপলা কিনতে আড়িয়াল বিলে এসে আফসার উদ্দিন বেপারী, টিপু মিয়া, আব্দুল বারেক, কাদের মুন্সীসহ আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মোঠা শাপলা একেকজন পাইকার ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১৩ থেকে ১৬ টাকা দরে ক্রয় করেন। তারপর গাড়ি ভাড়াসহ গড়ে ৩ টাকা, লেবার খরচ ১ টাকা, আড়তদারি খরচ ২ টাকাসহ মোট ২০ থেকে ২২ টাকা খরচ পড়ে। পরে কারওয়ানবাজার ও যাত্রাবাড়ীর পাইকারি সবজির আড়তে এসব শাপলা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে প্রতি মোঠা। ৭০ থেকে ৮০টি শাপলার এক মোঠা খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। কৃষকদের দাবি, শাপলা সংগ্রহের বিষয়ে যদি কোনো কৃষি পরামর্শ দেওয়া হতো, তাহলে তারা সংসার চালানোর পাশাপাশি হয়তো এর থেকে কিছুটা বাড়তি আয়ের উৎস ও খুঁজে পেত। তবে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, যথাযথ সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানি করা গেলে শাপলা থেকেই প্রতি বছর আয় হতে পারে কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। তিনি বলেন, শাপলা সংগ্রহে কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের কৃষকরা বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলা লতায় আছে ৩১ গ্রাম শর্করা তিন গ্রাম প্রোটিন ও ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী একটি সবজি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত