ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সখীপুরে ভূমির জটিলতা

খাজনা নিচ্ছে না দেড় যুগ

খাজনা নিচ্ছে না দেড় যুগ

ভূমির জটিলতা প্রায় ১০০ বছরের, সরকার খাজনা নিচ্ছে না দেড় যুগ। ভূমির সব জটিলতা জিইয়ে রেখেই শুরু করা হচ্ছে ডিজিটাল জরিপ। উপজেলার ৬১টি মৌজার প্রতিটিতেই রয়েছে ভূমির ত্রিমুখী মালিকানা জটিলতা। একই দাগে ব্যক্তি, সরকার ও বন বিভাগের মালিকানা জটিলতা নিরসন করে ‘ডিজিটাল জরিপ’ এর কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ভূমি মালিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিটি মৌজায় একই দাগের ভূমিতে মালিক তিনপক্ষ। কিছু দাগে ভূমির পরিমাণের বিপরীতে লেখা রয়েছে ‘এরিয়া দখল মোতাবেক’। শত বছরের এ জটিলতা উপজেলার ৬১ মৌজাতেই বিদ্যমান। জমিদারি শাসন আমল থেকেই এ জটিলতার মূল সূত্রপাত। ১৯২৭ সালের বন আইনের ভূমি হতে ১৯৩৪ সালে অবমুক্ত গেজেটভুক্ত ভূমি, ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনের ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি এবং ১৯৮৩ সালে ব্যক্তি নামে এসএ রেকর্ডীয় ভূমিতে বন আইনে ৪ ও ৬ ধারায় জারি করা নোটিশে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। ২০০৬ সলের একটি পত্রের সূত্রে ভূমির চলমান কার্যক্রম প্রক্রিয়া স্থগিত করে খাজনা আদায় বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় ভূমি অফিস। এসব জটলায় আটকে আছে রেকর্ডীয় ভূমির খাজনা আদায়, নামজারি ও সাব-রেজিস্ট্রি দলিল নিবন্ধন। ফলে এলাকায় গড়ে উঠছে না স্থায়ী কোনো স্থাপনা ও শিল্পকারখানা। স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিন জানা গেছে, ভূমির ত্রিমুখী জটিলতা নিরসনে সরকার ১৯৭৬-৮৫ সালে জরিপ আইন অনুযায়ী উপজেলার ১৪টি মৌজায় আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) রেকর্ডের কার্যক্রম শেষ করে। বিধি অনুযায়ী ওই ১৪টি মৌজার মধ্যে নয়টি মৌজার গেজেট ও আটটি মৌজার স্বত্বলিপি প্রকাশিত হয়। এতে তিনপক্ষের পৃথক খতিয়ান সৃজিত হয়। ওই রেকর্ডের আটটি মৌজার খাজনা আদায়ের জন্য স্বত্বলিপি সখীপুর ভূমি অফিসে আসে। ওই সময় বন বিভাগ স্থানীয় ভূমি অফিসে আপত্তি দেয়। যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। প্রতিমাবংকী গ্রামের ভুক্তভোগী আবুল কাশেম শিকদার (৬৭) বলেন, বন বিভাগ মৌখিক অভিযোগ করলেও লিপিত রেকর্ডের কার্যক্রম বন্ধ বা বাতিল হয়ে যায়। কাজেই ডিজিটাল জরিপের আগে বন বিভাগের হয়রানি থেকে মুক্ত হতে হবে। কিতাব আলী মুন্সী (৬৯) বলেন, শত বছরে আমাদের বাপ-দাদারা এই মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন। তাদের কবরের ঠিকানাও মালিকানা জটিলতায় প্রশ্নবিদ্ধ। মরার আগে আমাদের কবরের মাটির মালিকানা স্বত্ব নিশ্চিত করা যাবে কি-না, সেটিও অনিশ্চিত। উপজেলা ভূমি অধিকার আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, আমরা ভূমির জটিলতা নিরসন ও ১৪ মৌজার আরএস রেকর্ড কার্যকর করার দাবিতে সড়ক অবরোধ, হরতাল ও গণঅনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি। তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীও (রেজাউল করিম হীরা) দাবি বাস্তবায়নের কথা দিয়েছিলেন। তিনিও কথা রাখেননি। সম্প্রতি উপজেলার ৮টি মৌজায় ডিজিটাল জরিপের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জুরুল মোর্শেদ বলেন, উপজেলার ভূমির মালিকানা জটিলতা দীর্ঘদিনের। নানামুখী এ জটিলতা উপজেলার ৬১টি মৌজাতেই বিদ্যমান। চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জানতে চাইলে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য বীব মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ভূমির জটিলতা নিরসনে সংসদে একাধিকবার ব্যক্তব্য উপস্থাপন করেছি। সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত সময়ে সমাধান আশাবাদী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত