ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নেত্রকোণায় নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গ্যাস : তাতেই চলছে রান্না

নেত্রকোণায় নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গ্যাস : তাতেই চলছে রান্না

নিরাপদ পানির জন্য বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছিলেন নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামের নেকবর আলী। সেই নলকূপের পাইপ দিয়ে কিছুদিন পানি উঠলেও এখন বের হচ্ছে গ্যাস। এই গ্যাসে রান্না-বান্নার কাজও সারছেন বাড়ির গৃহিণীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয়-সাত মাস আগে নেকবর আলী নিরাপদ পানির জন্য তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে ৩০ ফুট পাইপের একটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেন। নলকূপটি দিয়ে প্রথম কিছুদিন পানি উঠলেও পরে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ দিন আগে নলকূপটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ঢাকনা খোলতেই শোঁ শোঁ শব্দ কানে আসে।

নলকূপ থেকে গ্যাস উঠছে ভেবে উৎসাহী কিছুলোক দিয়াশলাই জ্বালিয়ে পাইপের মুখে ধরতেই আগুন জ্বলে উঠে। এ খবরে পেয়ে নেকবর আলীর বাড়িতে প্রতিদিনই ভিড় করছে এলাকার কৌতূহলী লোকজন। গতকাল বুধবার দুপুরে নেকবর আলীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন নেকবর আলী। ৪ বছর আগে তিনি পরিবারসহ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন। গ্রামে এসে ২৬ শতক জায়গা কিনে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর পরিবারের পানির চাহিদা পূরণের জন্য বাড়িতে একটি অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন করেন। কিন্তু টিউবওয়েলটি একপর্যায়ে বিকল হয়ে গেলে সাত মাস আগে টিউবওয়েলের পাইপগুলো উঠিয়ে বাড়ির অন্য স্থানে পুনরায় আরো একটি অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন করেন। এই টিউবওয়েলের পানি পানসহ রান্নার কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন তারা। সম্প্রতি এই টিউবওয়েলটিও বিকল হয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তা মেরামতের চেষ্টা করে। কিন্তু টিউবওয়েলটির ওপরের অংশ খুলতে গেলেই শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পান এবং একপর্যায়ে টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হতে দেখেন তারা। পরে ওই গ্যাসে আগুন জ্বালিয়ে তা পরীক্ষা করেন পরিবারের লোকজন। অবশ্য তা দেখে টিউবওয়েলটির মেরামত কাজও বন্ধ করে দেন। বর্তমানে বিকল টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে বের হয়ে আসা গ্যাসের মাধ্যমে পরিবারটির প্রতিদিনের রান্নার কাজ চলছে। এছাড়া প্রথম বাড়ির যে স্থানে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছিল, সেই জায়গা দিয়েও বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে বলে জানান পরিবারের লোকজন। এ বিষয়ে নেকবর আলীর বড় ছেলে সাইকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ির নষ্ট টিউবওয়েলটি মেরামত করতে গিয়ে দেখি গ্যাসের মতো বের হচ্ছে। তারপর কৌতূহলবশত সেই গ্যাসে দিশলাইয়ের কাঠি ধরতে আগুন জ্বলতে থাকে। গ্যাসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর টিউবওয়েলের ওপরের অংশে হাঁড়ি বসিয়ে বর্তমানে আমাদের পরিবারের রান্না করার জন্য ব্যবস্থা করে দিই। গত কয়েক দিন ধরে সতর্কতা অবলম্বন করে এ গ্যাস দিয়েই রান্নার কাজ করছে আমার স্ত্রী সাবিকুন নাহার। তবে এভাবে রান্না করায় যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান। কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার মো. শাহজাহান বলেন, আমরা সরেজমিন গিয়ে ঘটনাটি দেখেছি।

৩০ ফুট গভীরতার অগভীর একটি বিকল টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। ওই গ্যাস জ্বালিয়ে ব্যবহার করা যায় আবার ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ফেলাও যায়। এতে পরিবারটির কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা নেই। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, বিকল হয়ে যাওয়া একটি টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে। তবে বর্তমানে যাতে কোনো রকমের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত