শেরপুরে মধ্যরাতের ‘ভ্যান বাজার’

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মনিরুজ্জামান রিপন, শেরপুর

জীবন ধারণের জন্য কত রকমই না কর্ম করে থাকে মানুষ। দিন মজুর থেকে শুরু করে উচ্চ বৃত্তদের কর্মের শেষ নেই। তবে বিশ্বায়নের কারণে সমাজের প্রান্তিক মানুষের মধ্যে সম্প্রতি নতুন নতুন কর্ম সৃষ্টি হয়েছে। তেমনি একটি পেশা মধ্যরাতে ভ্যান নিয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ওপর কাঁচাবাজারের ব্যবসা করা। ভ্যানের মধ্যে খাঁচা বসিয়ে আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, লাউ, পটলসহ নানা শাকসবজির পসড়া সাজিয়ে শহরজুড়ে ঘুরে ঘুরে তাদের সেই পণ্য বিক্রি করে থাকে। এদের মধ্যে শেরপুর জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী নয়ানীবাজার কলেজ রোড এলাকায় নিয়মিত বসে এ ভ্যান বাজার। তবে তা অন্যান্য এলাকার চেয়ে ভিন্ন। এ বাজারটি মূলত বসে রাত ১০টার পর এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা থাকেন রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। এছাড়া শহরের রঘুনাথবাজার নিউমার্কেট মোড় থেকে থানা মোড় সড়কেও বেশ কিছু ভ্যান বাজার লক্ষ্য করা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভ্যান ও তরিতরকারি পাওয়া যায় ওই নয়ানীবাজার এলাকার ভ্যান বাজারে।

জানা গেছে, এখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ভ্যান নিয়ে আসেন সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লার প্রান্তিক ক্ষুদ্র কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী। তারা মূলত প্রতিদিন বিকাল বেলা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সবজি ক্ষেতে এবং বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে তাদের পছন্দের টাটকা শাকসবজি ক্রয় করে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরে। পরে তারা ওই শাকসবজি ধোয়মোছা করে তাদের ভ্যানে করে বেরিয়ে পড়ে শহরের উদ্দেশে। শহরের বিভিন্ন দোকানপাট রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে সবশেষে রাত ১০টার পর জড়ো হয় নয়ানীবাজার কলেজ রোড এলাকায়। সেখানে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ওই ভ্যান বাজারে গিয়ে বাজার-সওদা শুরু করেন।

ভ্যান বাজারের ভ্যান মালিকরাও তাদের মালামাল শেষ না হলেও সর্বশেষ রাত ২টার দিকে তারা তাদের ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এরপর ঘুমিয়ে পরে পরের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের সাংসারিক কাজকর্ম শেষ করে রাখেন। এরপর দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন পাইকারি বাজার এবং প্রত্যন্ত গ্রামের টাটকা সবজি ক্ষেতের সন্ধানে। এ বিষয়ে শহরের মিরগঞ্জ মহল্লার ভ্যান ব্যবসায়ী আনোয়ার জানায়, আমরা সারাদিন নিজেদের বিভিন্ন কাজকর্ম শেষ করে রাতের বাজারের জন্য প্রস্তুতি নেই। ভ্যান নিয়ে সন্ধ্যার পর বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে বেচাবিক্রি করে ভোর রাতে, কখনো বা সকালবেলা বাসায় ফিরি। এখানে আমাদের মাত্র ২০ টাকা বাজারের টোল দিতে হয়। এছাড়া আমাদের কোনো খরচ নেই।

সরকারি চাকরিজীবী আব্দুর রউফ এবং মশিউর রহমান দুলাল জানায়, অফিসের কাজ এবং শহরের অন্যান্য কাজ সেরে বাসায় ফেরার পথে এই ভ্যান বাজার থেকে টাটকা সবজি কিনে থাকি। এতে আমার প্রতি দিনের বাজার করতে বাড়তি ঝামেলা হয় না। এ বিষয়ে নয়ানীবাজারের ইজারাদার আব্দুস সাত্তার জানান, শহরের অন্যান্য বাজারে অনেক বেশি ইজারা টোল আদায় করা হলেও আমাদের এখানে বিশেষ করে রাতের ভ্যান বাজারের ভ্যান মালিকদের কাছ থেকে মাত্র ২০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়, যাতে গরিব ভ্যান মালিকদের কোনো সমস্যা না হয়।