ভাঙনের কবলে মুক্তারপুর রিকাবীবাজার সড়ক

ঠিকাদারের অবহেলা

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাসুদ রানা, মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে সদর উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে মুক্তারপুর-রিকাবীবাজার ১ হাজার ৩০০ মিটার সড়কের নির্মাণকাজ ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নদীভাঙনে বিলীন হতে বসেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ সময়মতো নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় প্রায় ৩০০ মিটার সড়কের অর্ধেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে। সড়ক রক্ষায় নদীর তীরে বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে। ফেলা হয়েছে কিছু বালুর বস্তা। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আলোর মুখ দেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে মুক্তারপুরের কয়েকটি হিমাগারের আলু, রিকাবীবাজারের বিভিন্ন আড়তের চাল, মিরকাদিম কাঠপট্টির কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহনে, হেঁটে শত শত মানুষ চলাচল করে। এখন কোনো বড় ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। মুক্তারপুর থেকে রিকাবীবাজার যেতে বিকল্পপথে ডিঙ্গাভাঙ্গা হয়ে ১ কিলোমিটার বেশি ঘুরে যেতে হয়। সেখানে প্রায় যানজট লেগে থাকে। এতে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যাওয়া যায় না। এদিকে সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধিনে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কের বর্তমান অবস্থা দেখে ‘সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল নিষিদ্ধ’ এমন একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে রেখেছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মুক্তারপুর-রিকাবিবাজার ১৩ শত মিটার সড়কের জন্য প্রায় ৭০০ মিটার আরসিসি ঢালাই, বাকি অংশ পিচঢালাই, গাইড ওয়াল, ব্লক স্থাপনসহ প্রায় ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার দরপত্র প্রদান করা হয়। সড়কটি কাজ পান মেসার্স আবিদ মনসুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে উপঠিকাদার মো. ফিরোজ আলম। ফিরোজ আলম ঢাকায় ধানমন্ডিতে থাকেন। গত ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কাজটি শেষ করার কথা ছিল চলতি (২০২৩ সাল) বছরের ২৫ জুনের মধ্যে। এরই মধ্যে কাজের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। ফলে ঠিকাদার সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন। সরেজমিনে মুক্তারপুর-রিকাবিবাজার সড়কে দেখা যায়, সড়কের মাঝামাঝি সেতু হতে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত ৩০০ মিটার অংশ ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে সড়কের অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে। সড়কের বাকি অর্ধেক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। মালিপাথর এলাকার ব্যবসায়ী রফিক মন্ডল জানান, গত ৫ থেকে ৬ মাস হয়েছে ঠিকাদার সড়কের কাজ অর্ধেক করে এভাবে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছে। শুনেছি এরই মধ্যে কাজের সময়ও শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে চলতি বর্ষায় বৃষ্টি পাতের কারণে ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্রোতের তোরে সড়কের প্রায় ৩০০ মিটার অংশ শহর রক্ষাবাঁধসহ সড়কের অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে গোটা সড়কটিই বিলীন হয়ে যাবে। ঠিকাদার মো. ফিরোজ আলম জানান, আমি কাজ শুরু করার পরে আবার বর্ষার পানি চলে আসায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টি কারণে করতে পারছিলাম না। ভাঙা অংশে বাঁশ ও বালু ফেলা হয়েছে। এটাও প্রকল্পের খরচের বাইরে আমাকে ব্যয় করতে হয়েছে। জনগণের ভোগান্তির কথা ভেবে আমার ভর্তুকি ও লোকসান হলেও আমি আগামী কয়েকমাসের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ করে দেব।

ঠিকাদারের অবহেলায় সড়কের বর্তমান অবস্থা তৈরি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোনায়েম সরকার জানান, সড়কের ক্ষতির জন্য যেহেতু ঠিকাদারের অবহেলা জড়িত, তাই এর ভর্তুকি ঠিকাদারকেই দিতে হবে। এই কথা আমরা ঠিকাদারকে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। ঠিকাদার সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন।