চা-পাতা বেশি উত্তোলনের নির্দেশ

নারী শ্রমিকদের কর্মবিরতি

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা বাগানে মালিকপক্ষ থেকে নিরিখ (পাতি উত্তোলন) বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন নারী শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে কমলগঞ্জের আলীনগর, সুনছড়া ও কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানে নারী শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকরা বলছেন, ১৮ কেজি পাতি উত্তোলনের নিরিখ থাকলেও বর্তমানে সেটি ২০ কেজি করা হয়েছে। এতে নারী শ্রমিকদের ওপর চাপ বেড়েছে। ১৮ কেজির নিরিখে ফিরে না গেলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। চা শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা বাগানের টিলা-টক্করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাতা উত্তোলন করতে হয়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কেউ নিরিখ পুরো করে আবার কেউ নিরিখ পুরো করতে পারেন না। নিরিখের চেয়ে ১ কেজি কম হলে ১০ টাকা কেটে রাখা হয়। আর ১ কেজি বেশি তুললে দ্বিগুণ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় মাত্র ৪ টাকা। সে কারণে তারা প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শনিবার সকাল থেকে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করেন ও অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা তিনটা) কর্মবিরতি পালন করছিলেন তারা। আন্দোলনরত নারী চা শ্রমিক কুন্তি রবিদাস, বিনতি বাউরী, কমলা মৃধা, রিপা ইন্দোয়ার, বাসন্তী বাউরী ও সাবিত্রি বৈদ্য বলেন, ‘চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭০ টাকা। তাতে নিরিখে ১৮ কেজি পাতি উত্তোলন করলে প্রতি কেজি পাতির মূল্য দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪৫ পয়সা। শ্রম আইনে রয়েছে অতিরিক্ত উত্তোলনে দ্বিগুন মজুরি দেওয়ার কথা। দ্বিগুন টাকা না দিয়ে আবারও নারী শ্রমিকদের ওপর ২ কেজি বেশি পাতি উত্তোলন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২০ কেজি নিরিখ করে নারীদের ওপর শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে, এটি কোনোমতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ১৮ কেজির নিরিখ বহাল না রাখলে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় আলীনগর চা বাগানের নারী নেত্রী গীতা গোয়ালার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা করেছিল নারী ও পুরুষ চা শ্রমিকরা। চাতলাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্য বাগানে নিরিখ বাড়ানো হয়েছে। তাই আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে। তাছাড়া হেড অফিসের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না।’ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, ‘হঠাৎ করে চা বাগানগুলোতে নিরিখ বাড়ানোর বিষয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাগানগুলোতে নিরিখ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনই নেই। যদি কোনো বাগানে নিরিখ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তবে আলাপ-আলোচনা করে তা বাড়ানো উচিত।’