শ্যামনগরে প্রসূতিদের জিম্মি করে ক্লিনিক মালিকদের অর্থ বাণিজ্য

ভয় দেখিয়ে সিজারে বাধ্য করার অভিযোগ

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর

শ্যামনগরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা প্রসূতিদের জিম্মি করে অর্থবাণিজ্যর উদ্দেশে চিকিৎসক থেকে শুরু করে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রোগীসহ স্বজনদের নরমালে ভয় দেখিয়ে সিজারে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্যামনগরে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ান পদ্ধতিতে আশঙ্কাজনকভাবে সন্তান জন্ম হওয়ার হার বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগরের প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কোনো প্রসূতি পেলেই একশ্রেণির অসাধু চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালসহ সবাইমিলে বিভিন্ন অজুহাতে রোগীকে নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে কৌশলে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলেন। এমনকি নরমালে ভয় দেখিয়ে রোগীকে সিজারে বাধ্য করে এমন অভিযোগ অহরহ। এ ছাড়াও সিজারের প্রয়োজন না হলে মা কিংবা নবজাতকের ক্ষতি হওয়ার ভয়ও দেখানো হয়ে থাকে। আর ঠিক তখনই রোগীর স্বজনরা নিরুপায় হয়ে প্রসূতি ও সুস্থ সন্তানের স্বার্থে সিজারের মাধ্যমে সন্তানপ্রসব করাতে বাধ্য হন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিজারে বাচ্চা প্রসবের ফলে ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন মা ও শিশু উভয়েই। শ্যামনগর উপজেলা সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১০০ নবজাতকের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগ জন্ম স্বাভাবিকভাবে হলেও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সিজারের হার বেশি। উপজেলার পরাণপুর গ্রামের বাসিন্দা রজব আলী জানান, তার স্ত্রীকে অল্প কিছুদিন আগে শ্যামনগরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করাতে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার বলেন তার গর্ভের সন্তান বড় হয়ে গেছে, এ জন্য নরমালে সম্ভব নয়, সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে হবে। তাদের নরমালে ভয় দেখিয়ে সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে বাধ্য করেছিল। বর্তমানে তার স্ত্রী বিভিন্ন জটিল সমস্যায় ভোগছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান অফিস দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ৩ হাজার ১২০ জন প্রসূতি রোগী। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৫০৬ জনের সিজারে সন্তানপ্রসব হয়েছে। আর বাকিটা হয়েছে নরমাল প্রসব। রোগীর স্বজন, অজ্ঞান ডাক্তার ও সার্জনের উপস্থিতিতে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সিজার করা হয়। কিন্তু অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে যদি কোনো হাসপাতাল মালিক সম্মতিপত্র ছাড়া সিজার করে আর এতে কোনো ঝামেলা হলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রসূতি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা, সুব্রত কুমার বলেন, শিশু ও মায়ের অবস্থার ওপর নির্ভর করে সিজার কিংবা ডেলিভারি নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, সিজারে বাচ্চা হলে নারী তার স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত হন। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ডা. অজিত কুমার নামের অজ্ঞান করার ডাক্তার রয়েছে- উনি শুক্রবার ও শনিবার বাদে সব সময় শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকেন এবং রোগীর সিজার প্রয়োজন হলে সেটা আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেই এবং সিজারের সব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রাইভেট রোগী দেখার ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগী না দিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীদের পাঠাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিনিক মালিকরা ডাক্তারদের বিভিন্ন উপঢৌকনে সন্তুষ্ট করে রোগী ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্লিনিক মালিকরা হচ্ছে আঙুল ফুলে কলাগাছ আর সহজ সরল মানুষরা হচ্ছে সর্বশান্ত।