ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্তিত্ব সংকটে কালীগঞ্জের মৃৎশিল্প

অস্তিত্ব সংকটে কালীগঞ্জের মৃৎশিল্প

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় মৃৎশিল্প একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই শিল্পে উপজেলার জামালপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি পরিবার এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তবে যে কয়েকজন কারিগর কাজ করছেন, তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কোনো রকমে টিকে আছেন। ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও দৈনন্দিন নানা কাজে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সুপ্রাচীন এ শিল্প। কারিগরদের দাবি, সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প ফিরে পেতে পারে তার হারানো জৌলুস। সেই সঙ্গে আয় হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা। সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের নাওয়ান ও জামালপুর ইউনিয়নের নারগানা গ্রামে কুমার বা পাল সম্প্রদায়ের বসবাস। এই দুই এলাকাতেই প্রাচীনকাল থেকে পালপাড়ায় কুমারদের বসবাস। বর্তমানে কালীগঞ্জে কুমার বা পাল সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫০ পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। মৃৎশিল্পীরা মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির পাশাপাশি সব ধরনের দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরিতে দক্ষ। হাত এবং চাকার সাহায্যে কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরির পর কাঁচা থাকতে তাতে কাঠি দিয়ে পাতা, ফুল, পাখি ও বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় রেখার নকশা করা হয়। কখনো আবার দ্রব্যাদি পোড়ানোর পর এতে নানা রঙের আকর্ষণীয় নকশা করা হয়। এছাড়াও বাঁশ, খড়কুটা, মাটি, কাপড় ও রং দিয়ে নির্মিত তাদের মূর্তিগুলো এক একটি অসাধারণ শিল্প। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র পোড়ানোর জন্য আলাদা ঘরের অভাবসহ নানা কারণে মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বক্তারপুর ইউনিয়নের নাওয়ান গ্রামের হরে কৃষ্ণ পাল বলেন, এ পেশায় থেকে জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, সংসার আর চলে না। আগের মতো মানুষজনের মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিকমতো খেতেই পারি না। তাই ভাবছি অটোরিকশা চালাব। তাতে করে আমাদের সংসার চলবে, কষ্ট কম হবে। নাওয়ান মোড় এলাকার ‘মা’ মৃৎশিল্প স্টোরের স্বত্বাধীকারী শিশির পাল বলেন, মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন আর আগের মত চলে না। মায়ায় পড়ে বাবার আমলের পুরাতন ব্যবসা ছাড়তেও পারছি না। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের ভিড়ে আমাদের এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এ পেশায় থেকে পেটের খাবারটুকুই জোগাড় করা কষ্টকর। নারগানা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য নিপেন্দ্র চন্দ্র পাল জানান, আমরা এখনো এ পেশা ধরে রেখেছি। কালীগঞ্জ মৃৎশিল্পের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে সিলভার, স্টিল, প্লাস্টিক, সিরামিক, চীনামাটির অত্যাধুনিক তৈজসপত্রের কারণে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া মাটি, জ্বালানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। মৃৎশিল্পের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এছাড়াও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতাম। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে জানতে চাইলে বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান আকন্দ ফারুক প্রতিবেদককে বলেন, মৃৎশিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। তবে পরিষদের পক্ষ হতে কিছু করার নেই। তবে তারা যদি সম্মিলিতভাবে এমপি মহোদয়ের কাছে সাহয্যের আবেদন করে, তাহলে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব। মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই নানা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত