ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রাচুর্যে ভরে উঠেছে সুন্দরবন

তিন মাস পর খুলছে দ্বার
প্রাচুর্যে ভরে উঠেছে সুন্দরবন

ঋতুপ্রবাহে এখন শরৎ কাল হলেও প্রকৃতিতে বর্ষার প্রভাব বিরাজ করছে। বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে সুন্দরবনের গাছপালাও সজীব হয়ে উঠেছে। সুনসান নীরবতায় সুন্দরবন যেন প্রকৃতির নিজস্ব অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে। দীর্ঘ ৩ মাস ধরে বনে দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ থাকায় বনের ওপর চাপ কমেছে। তাই এখন ভিন্ন রূপ সুন্দরবন ও বনের বন্যপ্রাণীর মাঝে। সুন্দরবনের ঘন সবুজ গাছের মাঝেই হঠাৎ দেখা যায় হরিণের পাল, নীরবতা ভেঙে হঠাৎ শোনা যায় পাখির ডাক। ঝাঁকে ঝাঁকে কাঁকড়া, ডলফিন ও কুমিরের দেখা মিলছে। মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ না থাকায় বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর ঝাঁকের দেখা মিলছে বনের নদ-নদী ও খালের পাড়গুলোয়। আর ভাগ্যে থাকলে দেখা মিলবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। সুন্দরবনের এই অপার্থিব সৌন্দর্য সব সময় দেখা মেলে না। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাছ ও বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বিচরণ এবং প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাস বনের নদী-খালে মাছ শিকার আহরণে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা ছিল। শুধু মাছ শিকারই বন্ধ নয়, নির্দিষ্ট এ সময়জুড়ে বনের অভ্যন্তরে ও অভয়ারণ্যে পর্যটকদের প্রবেশও ছিল বন্ধ। স্থানীয় জেলে-বাওয়ালী মৌয়ালরা বলেন, সুন্দরবনে আগের তুলনায় বনে পশুপাখি অনেক বেশি চোখে পড়ছে। এমনকি নদী-খালে মিলছে নানা প্রজাতির মাছ। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষায় সুন্দরবন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। বইছে নির্মল বাতাস। চারপাশে রয়েছে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। জোয়ারের উচ্চতাও একটু বেশি এ সময়। এ সময়ে তাই বনের বেশিরভাগই পানিতে ডুবে যায়। সন্ধ্যা নামলেই পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠে চারপাশ। দীর্ঘ বিশ্রামে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা। হরিণ শাবকগুলো ছোটাছুটি করছে যত্রতত্র। সুন্দরী, বাইন, গড়ান, বনফল কেওড়ার ডালে ডালে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। সুন্দরবনের নদী ও খালে যত্রতত্র কুমিরের দেখা মিলছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জে কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যাম প্রসাদ বলেন, সুন্দরবনেরও কিছুটা বিশ্রাম দরকার। সারা বছর পর্যটক, জেলে ও বনজীবীদের পদচারণায় কিছুটা হলেও বিরক্ত থাকে বন্যপ্রাণীরা। পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আবু নাসের মোহসিন হেসেন বলেন, জেলেরা সুন্দরবনের নদী বা খালের পাড়ে যখন নামে, তখন তারা পাড়ে হাঁটত। এতে নদী বা খালের পাড়ের জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে নষ্ট হতো। বিশেষ করে এক ধরনের পাখি, কচ্ছপ, শামুক, ঝিনুক এই ধরণের কিছু ইকো সিস্টেম বিঘ্ন ঘটত জেলে বাওয়ালিরা হাঁটাহাঁটি করলে। গত ৯০ দিনে স্মার্ট প্যাট্রল টিমের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, খাল বা নদীর পাড়ের প্রতিবেশ সংরক্ষিত হচ্ছে। শামুক, ঝিনুক, পাখির উপস্থিতি বেশ লক্ষ্য করা গেছে। এটা আমাদের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য। এ সময় কাঁকড়া এবং সুন্দরী ফল পেকে ঝরে পরেছে। বর্ষার এসব ফল জোয়ারের পানিতে একস্থান থেকে অন্য স্থানে ভেসে গিয়ে নদীর পাড়গুলোতে ঠিকমতো বসছে এবং অঙ্কুরোদগম হচ্ছে। সুন্দরবনের উদ্ভিদের অঙ্কুরোদগমের হার বেড়েছে এই ৯০ দিনে

এছাড়া আরেকটি লক্ষণীয় তা হলো সুন্দরবনে পোনা ও মাছ ধরা নিষেধ থাকার কারণে পাইকগাছা ও কয়রার উপরের অংশে যেখানে নদী ও খাল প্রবেশ করেছে সেখান থেকে মানুষ মাছ ধরছে। গ্রামের মধ্যে যেখানে আগে কখনো পোনা পাওয়া যায়নি। ৯০ দিনে মানুষের আনাগোনা বা জাল ফেলার পায়ের কোনো ছাপ দেখা যাচ্ছে না, যার কারণে জীববৈচিত্র্য বাড়ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত