বরিশালের ব্রান্ড আইটেম ‘গুঠিয়ার সন্দেশ’

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গুঠিয়ার সন্দেশ। এক নামেই বেশ পরিচিত। নাম শুনলেই সবার মাথায় চলে আসে খাঁটি ছানা দিয়ে তৈরি সুস্বাদু এই খাবারটির কথা। এই সন্দেশের পরিচিতি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। অনেকের মতে এই সন্দেশের জন্যই খ্যাতি অর্জন করেছে গুঠিয়া ইউনিয়নটি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক ময়রা। সেই কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এই সন্দেশ, যা এখন ‘গুঠিয়ার সন্দেশ’ নামে পরিচিত। ৬১ বছর পরও একই গুণ-মান বজায় রেখেছে ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়ার সন্দেশ। বর্তমানে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন দোকানে এই গুঠিয়ার সন্দেশ পাওয়া গেলেও এগুলো নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। ফলে শিংহভাগ ক্রেতাই অরিজিনাল সন্দেশ কিনতে ছুটে যান গুঠিয়া বাজারে। বরিশাল থেকে গুঠিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। দূরত্বের কথা ভুলে ভোজনরসিকরা সেখানে ছুটে যান সন্দেশের স্বাদ নিতে। কারণ, অত্যন্ত মুখোরোচক এই সন্দেশে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কিছুই ব্যবহার করা হয় না। এছাড়া যেকোনো জেলার মানুষ বরিশালে এলে খোঁজ নেয় বরিশালের বিখ্যাত খাবারের। আর তখন সবার প্রথমেই চলে আসে গুঠিয়ার সন্দেশের কথা। বরিশালের গুঠিয়ার সন্দেশ এখন একটি ব্র্যান্ড আইটেমে পরিণত হয়েছে। বরিশাল থেকে গুঠিয়া বাজারে সন্দেশ কিনতে আসা লিটন মিয়া বলেন, পছন্দের মিষ্টান্নের তালিকায় গুঠিয়া সন্দেশ থাকে সবার আগে। আমাদের বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে গুঠিয়া সন্দেশ দিয়ে মেহমানদারি করি। কারণ, এই সন্দেশে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই। ছোট-বড় সবাই খেতে পারে। এছাড়া এই সন্দেশ মাঝেমধ্যে আত্মীয়স্বজনের জন্য বিদেশেও পাঠাই।

সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ময়রা পরিমল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, সাধারণত ৫ থেকে ৬ কেজি দুধে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে ১ কেজি চিনি মিশিয়ে অল্প জ্বাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই কাঁচামাল তৈরি। তা পরিমাণ মতো নিয়ে কাঠের ওপর রেখে সন্দেশের আকার দেয়া হয়। তিনি বলেন, সন্দেশ তৈরিতে পরিমাণ মতো আঁচ ও পাকই হলো মূল। পরে সৌন্দর্যের জন্য সন্দেশের ওপর কিছমিছ দেওয়া হয়। গুঠিয়া সন্দেশের বিশেষত্ব হলো- এর থেকে গরুর টাটকা দুধের সু-ঘ্রাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে গুঠিয়া সন্দেশের কেজি সাড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কেজিতে ২৫টির মতো সন্দেশ পাওয়া যায়। কথা হয় গুঠিয়া সন্দেশের আদী বিক্রেতা বাদশা মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্ণধার শাওন হাওলাদারের (৪২) সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে তারাই এখন গুঠিয়ার সন্দেশ ব্যবসার আদী প্রতিষ্ঠান। তাদের পাশাপাশি গুঠিয়া বাজারে এখন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দুধ, চিনি এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এখন খুব বেশি লাভ হয় না। তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করি না। তিনি আরো বলেন, এ ব্যবসার শুরু পশ্চিমবঙ্গের সতীশ চন্দ্রের হাত ধরে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন। সেই কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এই সন্দেশ। সতীশ চন্দ্র বহু বছর আগে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই মারা যান। তারপর থেকে এই বিখ্যাত সন্দেশের ঐতিহ্য আমার বাবা বাদশা হাওলাদার (৯১) ধরে

রেখেছেন। বাবার কাছ থেকে সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া শিখে বর্তমানে এ ব্যবসা তিনিই চালাচ্ছেন বলে জানান।

দেশ-বিদেশের যেকোনো মানুষ বরিশালে এলে গুঠিয়ার সন্দেশের স্বাদ নিতে ভোলেন না। এমনকি যাওয়ার সময় গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়েও যান। আর ধীরে ধীরে এভাবেই গুঠিয়ার সন্দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।