রায়পুরায় মেঘনা নদীতে ফের ভাঙন

ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  একে এম রেজাউল করিম, রায়পুরা (নরসিংদী)

নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনার পানি বৃদ্ধি ও পানির স্রোতে নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে দিনাতিপাত করছেন নদীপাড়ের কয়েকশ’ পরিবার। রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নে গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মির্জারচর, তাতাপাড়া, কান্দাপাড়া, শান্তিপুর বাজার পর্যন্ত মেঘনায় পানির তিব্র স্রোতে তীরবর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ফের ভাঙন অব্যাহত। কিছু অংশে ডাম্পিং কাজে নিয়জিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে দূরগতি গাফিলতিতে ক্ষোভ জানান জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মির্জারচর এলাকায় গত কয়েক বছরে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাঁ, কবরস্থান ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীভাঙনের বিলীন হয়েছে। গত কয়েকদিনে পানি বৃদ্ধির ফলে মেঘনা নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। হুমকিতে দিনাতিপাত করছেন কয়েকশ’ পরিবার। নদীভাঙন রোধে ৪২০ মিটার অংশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর জন্য টেকভে ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর মাসে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের দায়িত্ব দেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরের জুলাই মাসে কাজটি সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। ফলে ওই অংশেও ভাঙন অব্যাহত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে দূর গতি গাফিলতিতে ক্ষোভ জানান জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউনিয়নের মির্জারচর, তাতাপাড়া, ধান্দাপাড়া, শান্তিপুর বাজার পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ না থাকায় বছরের পর বছর শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে মেঘনায় বিলীন হয়েছে বসত ভিটা, হাট-বাজার, ফসলি জমি, মসজিদ, কবরস্থান, মাদরাসা ঈদগা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ফের ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা কবরস্থানসহ কয়েকশ’ পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন বলেন, মেঘনা বেষ্টিত মির্জারচরের নদী তীরবর্তী এলাকা বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে অনেক পরিবার বাস্তহারা অন্ত্র আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। আবারও ভাঙনের হুমকিতে কয়েকশ’ পরিবার। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত প্রতিরক্ষা বাঁধ চাই। না হলে আগামীতে কয়েকটি গ্রাম বিলীনের পথে। মির্জারচর ইউপি চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার বলেন, ‘এর আগে এলাকায় নদীভাঙনে ফসলি জমি মসজিদ কবরস্থান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। দ্রুত প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা না হলে শত শত পরিবার বাস্তুহারা হয়ে যাবে। কিছু অংশের জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে। দ্রুত প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে যথাযত কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টিতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাইম বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাসহ নানান প্রতিকূলতার দরুণ কাজে দুর্গতি হয়। কাজের সময় বাড়িয়ে নিতে আবেদন করা হবে। আশা করি, দ্রুত কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারব।’ নরসিংদী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর জানান, ‘পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন হতে পারে। কিছু অংশে ভাঙন রোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর কাজ চলমান। পানি বৃদ্ধির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য জলবায়ু প্রজেক্টে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত জেলা মিটিংয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করা হয়। এসব এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।