ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গোলফলে সংসার চলে পা হারানো আব্দুর রহমানের

গোলফলে সংসার চলে পা হারানো আব্দুর রহমানের

সুন্দরবনসহ বিশ্বের প্রায় সব ম্যানগ্রোভ বনেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় গোলপাতা গাছ। পাম জাতীয় এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Nypa fruticans। ঘরের ছাউনি হিসেবে গোলপাতার ব্যবহার হচ্ছে বহু বছর আগে থেকে। তবে ফলও খাবার হিসেবে প্রচলিত রয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। গোল আকৃতির কালো রঙের এ ফলটির ভেতরের অংশ দেখতে অনেকটা পানি তালের মতো এবং স্বাদও পানি তালের মতোই। সুন্দরবনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদের ভেতর গোলপাতাই বেশি দেখা যায়। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদনদী ও খালবিলের পাশে প্রচুর পরিমাণ গোলপাতা গাছ জন্মায়। স্থানীয়রা এর গোলফল খেয়ে থাকলেও বাজারে বিক্রি হয়নি কখনো। তবে এবার ফলটির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে গত ৪ বছর ধরে গোলফল বিক্রি করেন সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো আব্দুর রহমান শেখ। বাগেরহাটের বিভিন্ন নদনদীর পাড়ে জন্মে থাকা গোলপাতা গাছ থেকে গোলফল সংগ্রহ করে প্রতি পিস ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন তিনি। ষাট গম্বুজের সামনে ফলটি বিক্রি করে গোলফলকে নিয়ে এসেছেন পর্যটকদের সামনে। ফলে তার নিজের আর্থিক স্বচ্ছলতাও যেমন ফিরেছে, তেমনি পর্যটকরা চিনেছেন ম্যানগ্রোভের অপ্রচলিত ফলটি। এ ফল বিক্রি করে প্রতিদিন তার দেড় থেকে ২০০০ টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহমান শেখ। তিনি বলেন, একসময় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। ৯ বছর আগে দুর্ঘটনায় পা হারানোর পরে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হতো। একসময় মনে হয় পর্যটন স্পটে অপ্রচলিত সুন্দরবনের খাবার গোলফল বিক্রি করলে লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। পরে কিছু গোলফল পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রি শুরু করি। ক্রেতাদের সাড়া পেয়ে পুরোদমে ব্যবসায় নেমে পড়ি। বাগেরহাটের বিভিন্ন নদনদীর পাশ থেকে গোলফল সংগ্রহ করি। অনেক সময় কিছু গৃহস্থবাড়ি থেকেও কম দামে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করি। স্ত্রী ও ছোট ছেলে আমাকে সহযোগিতা করে। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টাকার ফল বিক্রি করি। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় দর্শনার্থী বেশি আসে। ফলে একটু বেশি বিক্রি হয়। ওই টাকায় আমার সংসার বেশ ভালোই চলছে। তিনি আরো বলেন, ইচ্ছে করলে ভিক্ষা করে খেতে পারতাম। কিন্তু মানুষের কাছে হাত না পেতে, ফল বিক্রি করে খাই। এই বয়সে আমি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে এই অপ্রচলিত ফলটি সারাদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে এনেছি। সব মিলিয়ে গোলফল বিক্রি করে ভালো আছি। গোলফল বিক্রেতা আব্দুর রহমানের ছোট ছেলে রাসুল শেখ জানান, বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি কিছু করতে পারতেন না। আমরা লেখাপড়াও করতে পারিনি। বাবা পা হারানোর আগে ভ্যান চালাতেন। এখন আমরা গোলফল কেটে আনি, আব্বা বিক্রি করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত