যমুনার পানি বিপৎসীমার উপরে

পানিবন্দি তিন উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বগুড়ার তিন উপজেলা সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির স্রোতে একটি স্পার বাঁধের প্রায় ২০ মিটার ধসে গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সারিয়াকান্দি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর বাম অংশের নিচু এলাকার বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও কামালপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দীপন বলেন, আমার ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোনাতলা উপজেলার তেকানী-চুকাইনগর ও পাকুল্ল্যা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে চুকাইনগর, ভিকানের পাড়া, মোহনপুর, সরলিয়া, খাবুলিয়া, খাটিয়ামারি, সুজাইতপুর, রাধাকান্তপুর, আচারের পাড়া, পূর্ব সুজাইতপুর। এছাড়াও ধুনটের অল্প কিছু যমুনা নদীর অংশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ গবাদিপশু, ফসল নিয়ে এখনো চরের মধ্যে আছেন। তাদের আবাদ করা রোপা আমন, মাশকলাই, মরিচ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া ধানসহ অন্যান্য ফসল পানির মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে এসব ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চরের বাসিন্দারা। উজানের ঢলের পানিতে চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোও প্লাবিত হয়েছে। এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম কবির বলেন, এ উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল ও কর্নিবাড়ীর প্রায় ২৪টি বিদ্যালয় বন্যায় ডুবেছে।

তবে পাঠদান বন্ধ হয়নি। ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চরের উঁচু আশ্রয়স্থলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। গত বুধবার সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া স্পার-২ এর গোড়ার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে জিওব্যাগ, জিও টিউবব্যাগ দিয়ে ভাঙন রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর চলে আসে। এ নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, পানি ১৬ দশমিক ৩৩ মিটার উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশের বাঙালি নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। এ নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ দশমিক ৪০ মিটার উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, যমুনা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওূপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিন উপজেলার চরের সব এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আগামি ৩ থেকে ৪ দিন পানি বাড়বে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরবাসীকে বাঁধে আশ্রয় নিতে হবে।

তবে সমস্যা হয়েছে হাসনাপাড়া স্পার-২ বাঁধে। গতকাল রাতে আকস্মিকভাবে বাঁধের প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত ধসে গেছে। এ ছাড়া কাজলা, কামালপুর ইউনিয়নেও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এসব স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। আর পানি একেবারে নেমে গেলে হাসনাপাড়া স্পার বাঁধে স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।