ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মী’ শকুন

প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মী’ শকুন

মৌলভীবাজারে মৃত পশুর মাংস ফেলা হলেই শকুন আসছে। শকুন না থাকলে প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মী’ থাকবে না। আমরা পরিবেশ ও বন হারিয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। শুধু শকুন ফিরে এলেই হবে না, প্রকৃতিকেও রক্ষা করতে হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার বিশ্ব শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষ্যে গত শনিবার মৌলভীবাজারে শিল্পকলা একাডেমিতে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে বন বিভাগ ও আইউসিএন বাংলাদেশ। দেশের আনাচে-কানাচে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রায় তিন দশক আগেও শকুনের দেখা মিলেছে। খোলা মাঠে মৃত গবাদিপশু ফেলে রাখা হলে প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মী’ হিসেবে পরিচিত এই শকুন দল বেঁধে ছুটে এসেছে। নিমিষেই তারা মরদেহ সাবাড় করে স্থানটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে। শকুনের সেই আসর জমানো পরিবেশ আর নেই। এই প্রাণীটি সংরক্ষণের নানা উদ্যোগ, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কিছু শকুনের দেখা মিলছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের আটগাঁওয়ের একটি ভাগাড়ে সম্প্রতি একসঙ্গে ৪০টি শকুনের দেখা মিলেছে। স্থানটিতে মৃত গরু-ছাগল ফেলা হলেই ছোট-বড় দলে এই শকুনের ঝাঁক ছুটে আসে। বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শকুনই একমাত্র পাখি, যেটি মৃত পশু সতেজ থাকাকালেই চামড়া ফুটো করে মাংস খেতে পারে। যখন কোনো এলাকায় গবাদিপশু মারা গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন এসে মৃত পশুর মাংস খেয়েছে, সেই এলাকার পরিবেশ দ্রুত দুর্গন্ধমুক্ত হয়েছে। এছাড়া শকুন সেই প্রাণী, যার অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগজীবাণু হজমের ক্ষমতা আছে। কিন্তু প্রাণীটি সেই আগের মতো আর নেই। গত প্রায় তিন দশকে প্রকৃতি থেকে শকুনের সংখ্যা দ্রুত কমেছে। প্রাচীন, উঁচু ও বড় গাছ কেটে ফেলায় শকুন বাসস্থান হারিয়েছে। খাদ্য সংকটে পড়েছে। অসুস্থ গৃহপালিত পশুকে ডাইক্লোফেনাক, টিটোফ্লেনাক-জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, সেই পশু মারা গেলে তার মাংসে ওষুধের উপস্থিতি থেকে গেছে। সেই মৃত পশুর মাংস খেয়ে শকুন মারা গেছে। দেশে ও বিশ্বে এই পাখির অবস্থা এখন আর ভালো নেই। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোটের (আইইউসিএন) তালিকায় মহাবিপদাপন্ন পাখির তালিকাভুক্ত শকুন। বাংলাদেশে এই পাখির সংখ্যা অতি দ্রুত কমেছে। বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৮ সালে দেশে ১ হাজার ৯৭২টি শকুন ছিল। ২০১৫ সালের সর্বশেষ শুমারিতে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২৬০। এর মধ্যে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ১০০টির মতো শকুন আছে। হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যানে আছে ৭০ থেকে ৮০টি শকুন। আইইউসিএনের প্রোগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট মাহী ওয়াসীম বলেন, ‘আমাদের ধারণা, শকুন স্থিতাবস্থায় আছে। যে সংখ্যা আছে, তা কমছে না। তা একটা ভালো দিক।’ এদিকে সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের দীঘিরপাড় বাজার-সংলগ্ন আটগাঁওয়ের একটি পতিত জায়গায় প্রায়ই শকুনের দেখা মিলছে। পতিত জমির ভাগাড়ে মৃত গরু-ছাগল ফেলা হলেই শকুনের দল উড়ে আসে। গত ২৩ জুলাই একসঙ্গে ৪০টি শকুনের ঝাঁক দেখা গেছে। বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার বলেন, আটগাঁওয়ে একটি ভাগাড় আছে। সেখানে মরা গরু ফেলা হলেই শকুন আসছে। শুধু শকুন ফিরে এলেই হবে না, প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত