খালের উপর সেতু

দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির বন্ধন

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের উপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের যুবদের উদ্যোগ নির্মিত ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যরে কাঠের সেতু। আর এ সেতু মজবুত করেছে দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির সম্পর্ককে। কষ্ট লাঘব হয়েছে প্রতিদিন এপথ দিয়ে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষের। সেতুর কারণে যাতায়াত বন্ধ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বিদ্যালয়ে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যরা জানান, সেতুটি তৈরির আগে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রবীণ-প্রতিবন্ধী এ পারের মানুষ ওপারে যেতে পারত না। মসজিদ মন্দিরে যেতে না পারায় ব্যাহত হতো প্রার্থনা। দুইপারের মানুষের মধ্যে সামাজিকতা কমে গিয়েছিল দেখা সাক্ষাৎ না থাকায়। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে ঘুরে আসতে হতো ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার রাস্তা। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যবৃন্দ। নিজেদের শ্রম বৃথা যেতে না দিয়ে দৃশ্যমান করে তুলেছে কাঠের সেতুটি। ১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটি দুইপাশে দেয়া হয়েছে রেলিং। এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে। এছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও মাছ এ সেতুটি পার হয়ে বাজারজাত করতে পারছেন। সেতুটির অদূরে ১৮৮ নং পানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলের অন্তত ৭০ ভাগ শিশু খালের ওপারের গ্রাম থেকে আসত। ফলে স্কুলটিতে উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। সেতুটি হওয়ার পরে ভোগান্তি কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বেড়েছে উপস্থিতির সংখ্যাও। ১৮৮ নং পানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, চুনা খাল পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলে উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কম হয়েছিল। যা নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পরে। বর্তমানে সেতুটি নির্মাণ হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আল ইমরান বলেন, একটি ছোট্ট উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকারবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সমস্যা সমাধানে সেতুটি তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে মানুষ নির্বিঘ্নে খাল পারাপার হতে পারছে। আগে এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চুনাখাল পারাপারে ভোগান্তিতে পড়লেও তা এখন শান্তিতে পার হতে পারছে। স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা সেতুটি বানাতে সক্ষম হয়েছি।