গ্রীষ্মকালীন সবজির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁয় গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। উৎপাদন কম এবং বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায়। এদিকে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করতে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় চলতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। যার বাজারদর প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা। সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের বরেন্দ্রভূমি জেলা নওগাঁ। জেলার মাঠে মাঠে এখন গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ হচ্ছে। বিস্তীর্ণ মাঠে এখন বেগুন, করলা, কাকরল, পটোল, শষা, ঢ্যাঁড়স, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও বিভিন্ন শাকসবজির সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পরিচর্চায় ও বাজারজাতে ব্যস্ত চাষিরা। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় এবং বাজারে সরবরাহ কম থাকায় ভালো দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। সদর উপজেলার কশবা-কুয়ালগর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন- পাইকারিতে প্রতিকেজি লাল বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, সাদা বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৬৫ টাকা, কাকরল ও পটোল ৩৫ টাকা, তরই ৩০ টাকা, দেশি আলু ৪৭-৫০ টাকা ও হলেন্ডরা ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩৫ টাকা এবং লাউ প্রতিপিস ২০-২৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বাচারিগ্রাম গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ। তিনি এবছর ১২ কাঠা জমিতে লাল জাতের বেগুন চাষ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে জমি থেকে বেগুন উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে ৫ মণ। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন- ৩ মাসের এ ফসলে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। যা থেকে এ মৌসুমে বিক্রি হবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ খরচ বাদে লাভ থাকবে অন্তত ৬০ হাজার টাকা। এ বছর ভালো দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আফতাব বলেন- ৬ কাঠা জমিতে কাকরলের আবাদ করেছি। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০-৫৫ কেজি উত্তোলন হচ্ছে। কিছুদিন আগে পাইকারিতে ৪০ টাকা বিক্রি হলে এখন ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৫ হাজার টাকা খরচ করে এ মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।

সবজি চাষি রইচ উদ্দিন বলেন- গ্রীষ্মকালীন সবজিতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। উৎপাদন কম হলেও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় ভাল দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজিতে তেমন রোগবালাই হয়নি। তাই ফলন ভালো পেতে পরিচর্চায় ব্যস্ত চাষিরা। বাগাচারা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন- সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিপাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। পাইকারি বাজারে বেগুন ৬০ টাকা কেজি। ওই বেগুন খুচরা বাজারে ৮০ টাকা। করলা ৭০ টাকা কেজি। দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সবজি কিনে খাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নওগাঁ উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শাকসবজির উৎপাদন ভালো হচ্ছে। মাঠে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি রয়েছে। বাজারে কিছুটা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। প্রতিকেজি শাকসবজি গড়ে ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বসতবাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষে প্রদর্শনী ও প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। শাকসবজি থেকে এ বছর কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করবে। ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।