ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হার না মানা মঞ্জিলার জীবন সংগ্রাম

হার না মানা মঞ্জিলার জীবন সংগ্রাম

প্রতিদিন ভোরে নৌকার বৈঠা হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান মঞ্জিলা বেগম (৪৫)। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেয়া ঘাটের মাঝি হিসেবে নদী পারাপারের কাজ করেন। ঘরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বড় মেয়ে ও আরেক ছোট মেয়েসহ অসুস্থ স্বামীর সব ব্যয় বহন করতে হয় তাকেই। বাধ্য হয়েই মঞ্জিলাকে হতে হয়েছে খেয়া ঘাটের মাঝি। জীবনের গল্পে মঞ্জিলা বৈঠা হাতে এক সংগ্রামী নারী। সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজিবাড়ি এলাকায় অসুস্থ স্বামী শফি খান (৬০), বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বড় মেয়ে রুবিয়া খাতুন (১৫) ও ছোট মেয়ে সুমি আক্তারকে (১০) নিয়ে বসবাস মঞ্জিলা খাতুনের। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ১০-১২ বছর আগে কৃষিকাজের পাশাপাশি খেয়া নৌকা চালালেও অসুস্থ হওয়ার পর থেকে শফি খান এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র মঞ্জিলা বেগমই। নদী পারাপারে মঞ্জিলাকে প্রতিজন ১০ টাকা করে দেন। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা বাবদ দেন ৫ টাকা। এছাড়া স্থানীয়রা সামর্থ অনুসারে বাৎসরিক ১৫-২০ কেজি ধান দেন। এ দিয়েই সংসার চলে মঞ্জিলার। মঞ্জিলা বেগমের স্বামী শফি খান বলেন, শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। সেই কারণে আমি কোনো কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী নৌকা চালিয়ে খেয়া পারাপার করে উপার্জন করে সংসার চালায়। এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের কিন্তু আমি অসহায়। রাত হলে ভয় হয় তাই তখন আমি নিজেও নৌকায় বসে থাকি। অসুস্থ স্বামী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মেয়ের চিকিৎসাসহ পরিবারে সকল খরচ বহন করতে হয় মঞ্জিলা বেগমকেই। কষ্ট হলেও তাই বাধ্য হয়েই তাকে খেয়া পারাপারের কাজ করতে হচ্ছে। মঞ্জিলা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েটি প্রতিবন্ধী। আমার স্বামী যখন সুস্থ ছিল তখন সেই টুকটাক কৃষি কাজ করে সংসার চালাত। কিন্তু আমার স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে সে কোনো কাজ করতে পারে না। একজন নারী হয়ে নৌকার বৈঠা হাতে তুলে নিয়েছি। কাজটি অনেক কষ্টের। রাত বিরাতে নৌকা বাইতেও ভয় করে। কেউ যদি আমাদের সাহায্য করে একটি দোকান করার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কষ্টের কাজ করতে হইতো না। সমাজের বিত্তবানরা মঞ্জিলা বেগমের পাশে দাঁড়ালে পরিবারটি এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা জুবায়ের খান বলেন, আমরা ছোট থেকেই পরিবারটিকে দেখে আসছি। আগে মঞ্জিলার স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি নৌকা চালাতো। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মঞ্জিলা বেগম এখন খেয়া পারাপারের কাজ করেন। আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের যতটুকু সম্ভব সহায়তা করে থাকি। তবে সমাজের বিত্তবান যারা রয়েছেন তারা যদি তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে তারা একটু ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারতেন। শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মানবিক। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী পরিবারটিকে সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত