প্রাণ ফিরেছে রাঙামাটির পাহাড়ি ঝরনায়

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. হান্নান, রাঙামাটি প্রতিনিধি

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ঝরনা কবিতায় লিখেছিলেন- ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা! তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা! অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে, গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্ডলে কর্ণে, তনু ভরি’ যৌবন, তাপসী অপর্ণা! কবির কবিতার লাইনের মতোই পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির বর্ষার প্রকৃতি। নীলাকাশে সাদা মেঘের দৌড়াদৌড়ি, নিচে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ জলরাশির কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে আসা অসংখ্য ঝরনা। যেন মুগ্ধ জাগানিয়া প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের প্রতিচ্ছবি। এমন সৌন্দর্যে বর্ষাকে পেয়ে ভরা যৌবন পার করছে রাঙামাটির অসংখ্য ঝরনা। প্রতি বর্ষায় ভরা যৌবন রূপ ধারণ করে পাহাড়ি কোল বেয়ে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকা প্রতিটি ঝরনা। এরই মধ্যে রয়েছে বরকলের সুবলং ঝরনা, বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা, ঘাগড়ার কলাবাগান ও দেবতাছড়ি ঝরনা, কাপ্তাইয়ের ওয়া¹ার ফুকির মুরং ঝরনা। বর্ষার প্রতিকুল পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে শুধু ভ্রমণপিপাসুরা নয় স্থানীয়রাও ছুটে যান ঝরনার সান্নিধ্য পেতে। উচ্ছ্বাস-আনন্দে ছবি-ভিডিও তুলেন, স্নান করেন, নাচ-গান করেন এবং স্মৃতি ধরে রাখতে ঝরনার সঙ্গে কাটানো প্রতি মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা মনিরুজ্জামান একজন সরকারি কর্মকর্তা। স্বপরিবারে ছুটিতে বেড়াতে এসেছেন রাঙামাটিতে। প্রকৃতির সান্নিধ্য তাকে ভীষণ টানে। বিশেষ করে বর্ষামৌসুমে। ঘুরেছেন সুবলং ও ঘাগড়া কলাবাগান ঝরনাতে। তিনি এককথায় অনুভূতিতে জানালেন, প্রকৃতির এমন রূপ সত্যিই অসাধারণ। মনে গেঁেথ থাকবে আজীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দল বেঁধে আসা শিক্ষার্থীর মধ্যে নবনিতা চৈতি ঝরনার পানিতে ভিজে একেবারে একাকার। তিনি জানালেন, বেড়াতে আসাটাই স্বার্থক এখন। মূলত: এই সময়ে আসা ঝরনা দেখব বলে। ভীষণ ভালো লাগছে। কেউ কেউ বা আবার ঝরনা এলাকা ঘিরে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা থাকা নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, পর্যটকদের ময়লা-আবর্জনায় ঝরনার সৌন্দর্য বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান বলেন, স্বাভাবিকভাবে কাপ্তাই হ্রদের পাশাপাশি পাহাড়ি ঝরনার প্রতি ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসচেতন পর্যটকদের কারণে ঝরনার আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি শুধু ঝরনা নয়, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের হানি ঘটছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ঝরনা এলাকায় নোটিশ বোর্ড ও প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন স্থাপন করা জরুরি। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। কিভাবে যাবেন : সুবলং ঝরনায় যেতে হয় নৌপথে, ইঞ্জিনচালিত যেকোনো বোটে যাওয়া যায়। কাপ্তাইয়ের ওয়া¹ার ফুকির মুরং ঝরনায় যেতে হলে সড়ক পথে ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্বপাশ ধরে ৩ কিমি. পাহাড়ি পথ আর ছড়া হেঁটে এই স্থানে পৌঁছানো যায়। ধুপপানি ঝরনাটি দুর্গম এলাকায় অবস্থিত, নৌপথে বিলাইছড়ি উপজেলার উলুছড়ি থেকে নৌকা করে পাহাড়ি পথে হেঁটে ধুপপানি ঝরনাতে যেতে হয়।