ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুন্সীগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থামছে না রাতের বাল্কহেড

মুন্সীগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থামছে না রাতের বাল্কহেড

নদীবেষ্টিত জেলা মুন্সীগঞ্জ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীবাহী সব লঞ্চ এই জেলার ধলেশ্বরী ও মেঘনা নৌপথ হয়ে রাজধানীতে যাতায়াত করে। অন্যান্য নদীতেও বিভিন্ন নৌযানের চলাচল দিনরাত্রি। যে কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচলে মুন্সীগঞ্জের নদীপথ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ এসব নৌপথে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থামছে না সন্ধ্যার পর বালুবাহী বাল্কহেডের চলাচল। এতে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জে পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ট্রলার ডুবে ১০ জন নিহত হওয়ার পর আবারো আলোচনায় এসেছে এই নৌযান। ওই দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মরদেহ পাওয়া গেলেও এক শিশুর মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে নিবন্ধিত বালুবাহী বাল্কহেড ৬ হাজার ৩৭৯টি। যার মধ্যে রুট পারমিট রয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৫০টির। তবে বাস্তবে নৌপথে-এর কয়েকগুণ বেশি বাল্কহেড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বাল্কহেডের মাস্টার, চালক, সুকানিদের অধিকাংশেরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ নেই। এছাড়া রয়েছে ফিটনেসসহ নানা সমস্যা। মুন্সীগঞ্জ সংলগ্ন পদ্মায় এমন বালু লুটের প্রতিবাদে সম্প্রতি নদীতে ট্রলারবহর নিয়ে নৌর‌্যালি করেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। এরপরও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আটক, জব্দের তথ্য পাওয়া গেলেও সেই পুরোনো চিত্রে ফিরতে তা বেশি দিন সময় লাগে না। এই চক্রের পেছনে রয়েছে বালুখেকো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া। সরেজমিনে গত কিছুদিন জেলার বিভিন্ন নদীপথ ঘুরে দেখা যায়, রাতের বেলা বাল্কহেড চলছে। বিশেষ করে জেলা সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা সংলগ্ন পদ্মার শাখা খাল হয়ে মেঘনা নদীতে যাতায়াত করছে বাল্কহেড। আনলোড থাকা অবস্থায় এসব বাল্কহেড দূর থেকে দেখা গেলেও বিপজ্জনক হয়, যখন বালু বহন করে। সেসময় নৌযানটির অধিকাংশ অংশ পানিতে ডুবে থাকায় দূর থেকে বোঝারও উপায় থাকে না। নৌযানগুলোতে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও। এতে রাতের অন্ধকারে দূর থেকে বোঝার উপায় থাকে না বাল্কহেডের গতিবিধি। মুন্সীগঞ্জের নৌপথে রাতে বাল্কহেড চলাচলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। গত ৫ আগস্ট রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা শাখা তালতলা-গৌরগঞ্জ নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ৪৬ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় একটি পিকনিকের ট্রলার। এতে মৃত্যু হয় নারী-শিশুসহ ট্রলারে থাকা ১০ যাত্রীর। এর আগে গত বছর ২৬ মার্চ ভোরে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের অদূরে লঞ্চের ধাক্কায় পাঁচ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পাবনাগামী সিমেন্টবাহী বাল্কহেড। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় মুন্সীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনা নদীর চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সুরভী-৭ এর সঙ্গে ধাক্কায় ডুবে যায় ডেমরাগামী একটি বাল্কহেড। এ দুর্ঘটনায় লঞ্চের সামনের অংশ ছিদ্র হলে পাড়ে নোঙর করে প্রাণে রক্ষা পান যাত্রীরা। তবে নিহত হন ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটির শ্রমিক মোতালেব হোসেন (৫৫)। এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ধলেশ্বরী ও মেঘনার মোহনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ও কয়লা বহনকারী বাল্কহেডের সংঘর্ষে ৯ শ্রমিক আহত হন। একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌ-রুটের ধলেশ্বরী নদীতে লঞ্চ ও বালুবাহী বাল্কহেডের সংঘর্ষে লঞ্চের এক যাত্রী নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এ বিষয়ে নৌ-পুলিশের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, মেঘনা নদীর কলাগাছিয়া, ধলেশ্বরীর মুক্তারপুর পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়ত কাজ করছে নৌপুলিশ। কিছুদিন আগেও বড় একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সূর্যাস্তের পর বৈধ কিংবা অবৈধ কোনো বাল্কহেড চলতে পারবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত