তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরোটা বছরজুড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। চমৎকার এ ক্ষণে সামিল হতে সকাল থেকেই তিতাস পাড়ে ভিড় করতে শুরু করেন দর্শক। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিতাসের বুকে পড়ন্ত বিকেলে এ নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। চমৎকার এ বাইচ দেখে দারুণ খুশি দর্শকরা। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর অপসংস্কৃতির আড়ালে দিন দিন হারাতে বসেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর সংস্কৃতি। তবুও যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল এ মানুষগুলো। পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার নৌকাবাইচ তাদের নিয়ে গেছে একরকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকা বাইচ উপলক্ষ্যে শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।

ভাদ্রের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকা নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদরের চারটি, বিজয়নগর উপজেলার ৫টি, নবীনগর উপজেলার দুটি, আশুগঞ্জ উপজেলার দুটি ও নাসিরনগর উপজেলার একটিসহ মোট ১৫টি দল প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পড়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। বিকাল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলার নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলার নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা। পরে প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়া প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশ এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ তিতাসের দুই পাড়ে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপর ভীড় জমায়। অনেকেই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আনসার ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিসসহ কয়েকটি মেডিকেল টিম নিয়োজিত ছিল। এছাড়া ছিল ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।